সিনেমার শেষ দৃশ্যে
এই যে দহন।
এই যে একজন জলজ্যান্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা দেখানো হলো।
কী নির্মম!!!
কী জঘন্য!!!
এই ময়নার মানসিক গড়ন তৈরি করেছে কে?
আমাদের তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ!
একজন নারীর স্বাভাবিক চাওয়া-পাওয়া ইচ্ছা-অভিলাষের জন্য এখনো অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্ভর করতে হয় অন্যের উপর।
যখন কোন স্বাভাবিক বিষয় সমাজ, রাষ্ট্র দিতে ব্যর্থ হয়
তখনই শুরু হয় বিকৃতি।
ময়নাদের শিক্ষা দিবেন না।
আর্থিক নিরাপত্তার জন্য কোন কাজের সুযোগ তৈরি করে দিবেন না।
তখন ময়নারা কী করবে?
তারা কার প্রতি লয়াল হবে?
যে বাবা-মা-ভাই তাকে সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করে?
যে স্বামী তাকে গৃহবন্দী করে রাখতে চায়,
অহেতুক সন্দেহ করে?
যে স্বামীর নিকট সে কেবল তার সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক?
এই সকল শিশুতোষ ভালোবাসা বাদ দিয়ে অর্থকে ভালোবাসাই তো বাস্তবসম্মত, তাই না?
আমরা যে এক অস্বাভাবিক, বিকৃত সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করেছি, তার সমাধান কি ময়নাদের হত্যার মধ্য দিয়ে সম্ভব?
এইসব প্রশ্নই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
রায়হান রাফির তৈরি সুড়ঙ্গের ভেতর যেন আমিও ঢুকে গিয়েছি।
সেই অরিজিনাল সিনের কথা মনে পড়ে।
যেখানে শয়তান ইভকে প্ররোচিত করে। আর ইভ প্ররোচিত করে এ্যাডামকে। যেই কারণে আমরা বেহেশত হতে বিতাড়িত। এখানে শয়তানের জায়গা নিয়েছে অর্থ।
অর্থ ছাড়া একটা সমাজ কি আমরা নির্মাণ করতে পারি না?
তাহলেই তো সব ল্যাটা চুকে যায়।
মানুষে মানুষে সম্পর্কের ভিত্তি হবে ভালোবাসা।
ভালোবাসা দিয়ে বড়ো বোয়াল মাছ কেনা যাবে।
স্বর্ণের হার পাওয়া যাবে।
নতুন নতুন জামা পাওয়া যাবে অথবা সুগন্ধি ও শ্যাম্পু পাওয়া যাবে।
কি? হাস্যকর ঠেকছে?
তাহলে ময়নার কী দোষ?
সে তো চেয়েছে একটু উন্নত জীবনযাপন করতে।
আর তার উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছে বিয়ে নামক ব্যবস্থায় মোড়ানো স্বামীকে। যেটা আমাদের তথাকথিত ময়নারা ভেবে থাকেন। এভাবেই মেয়েবেলা হতে ময়নাদের চিন্তার পদ্ধতি তৈরি হয়, তৈরি করা হয়।
ময়নাকে এভাবে ভিলেন না বানালেও হতো।
যেন ব্যাংক ডাকাতির নেপথ্য কারণ ময়না।
(যদিও একজন আইনজীবী বলেছেন, পাঁচজনের অধিক জড়িত না থাকলে সেটা ডাকাতি হয় না।)
যদি অর্থপাচারের জন্য কানাডায় অবস্থিত বেগমদের দায়ী করা হয়, তাহলে কেমন হবে?
যেন নারীর জন্যই পুরুষ অন্যায় করে। ব্যাংক ডাকাতি করে। অর্থ পাচার করে। দুর্নীতি করে। অন্যের জমি দখল করে। অর্থাৎ সকল ক্রাইমের উৎস হলো নারী। এটাই তো আমাদের তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বয়ান। এই বয়ানের সার্থক রিফ্লেকশন হলো ‘সুড়ঙ্গ’ ছায়াছবি।
“A simple village electrician turns to crime and goes to extreme lengths to satisfy the needs of his beautiful, but greedy wife.”
মাসুদ চরিত্রে অভিনয় করা, আফরান নিশো’র প্রথম বড় পর্দায় কাজ। বেশ সাবলীল ও চমৎকার। আফরান নিশোর প্রতি শুভকামনা। ময়না চরিত্রে তমা মির্জার অভিনয় বেশ। সিনেমা দেখার সময় হলের প্রচুর দর্শকদের শাপ-শাপান্ত খেতে শুনেছি তাকে। এর মানে ময়না চরিত্র উনি নিখুঁতভাবেই ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। মোস্তফা মনোয়ারের অভিনয়ও দেখার মতো ছিলো। আর শহীদুজ্জামান সেলিম তো বরাবরের মতোই ফার্স্ট ক্লাস।