প্রতিবার পিরিয়ডের সময় আমার কেন জানি প্রতিটা প্যাডের প্যাকেট খুলতে গিয়ে বারবার মনে হয় কেন এত দাম জিনিসগুলোর! যেখানে প্রতিদিন ক্যাম্পেইন করা হচ্ছে, বলা হচ্ছে, “অস্বাস্থ্যকর কাপড় নয় বরং প্যাড ব্যবহার হউক।”
মেয়েদের আজকাল কতো মেয়েলী সমস্যা! বয়স একটু বাড়তেই শোনা যায় জরায়ু ক্যান্সার অথবা জরায়ু কেটে ফেলতে হবে।
তাহলে কেন এত ছেলেখেলা আমাদের জীবনটা নিয়ে? ক্যাম্পেইন শেষে একটা প্যাডের প্যাকেট ধরিয়ে দিলেই কি দায়িত্ব শেষ?
কে নিবে এই দায়ভার?
যেখানে চিকিৎসকের মতে ৪ ঘণ্টা অন্তর অন্তর প্যাড চেঞ্জ করতে বলা হয়েছে, সেখানে একটা প্যাডের প্যাকেটে মেয়েটার ক’দিন যায়?
মাসের কয়েকটা দিন মেয়েটার মনে আর শরীরে কী চলে, জানেন আপনারা?
কী সহ্য করে যায় মেয়েটা প্রতিটা মাসে?
৪ ঘণ্টা পরপর প্যাড চেঞ্জ করলে একদিনে ৬ টা।
এখন সব মেয়ের তো আর ৩ দিন অথবা ৫ দিনে পিরিয়ড শেষ হয়ে যায় না। কারো কারো তো ৭ দিনও থাকে।
তাহলে ৭ দিনে একটা মেয়ের প্যাড লাগবে ৪২ টা।
এখন খরচের কথায় আসা যাক। একটা ভালো মানের ৪২ টা প্যাডের দাম অন্তত ১০ টাকা করে হলেও ৪০০ অথবা কোনটা ৪৫০ টাকা। তাহলে এই যে, যার মাসে ৪০০ টাকার প্যাড কিনতে হচ্ছে, সে মেয়েটার ফ্যামিলির অবস্থাটা কেমন, সেটা তো দেখতে হবে।
আমরা সব মেয়েরা চাইলেই মাসে এতো টাকা নিজেদের জন্য বরাদ্দ রাখতে পারি না। আর সব মেয়ে তো স্বাবলম্বীও না। কিংবা সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারেরও নয়।
তাহলে একটা পরিবারে ২-৩ টা মেয়ে থাকলে তাদের প্যাডের খরচ একটু ভেবে দেখুন?
কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?
প্রশ্ন আমার সকলের কাছে, আমরা মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা যেখানে প্রতি কেজি চাল-ডাল-তেলের দাম আকাশচুম্বী, সেখানে একটা বাবার একার রোজগারে আমরা কী করে প্যাডের মতো অত্যাবশ্যকীয় জিনিসটা প্রতিমাসে ব্যবহার করবো?
চাইলেই হাজার টাকা প্যাডের খরচ সব বাবা বহন করতে পারেন না। কারণ তাদের সংসারে হাজার টাকায় ৫ থেকে ৭ দিন চলার প্ল্যানিং চলে। তাই দামের কথা চিন্তা করেও আমরা অনেকেই অসচেতনতার পথ অবলম্বন করি। এমন একটা দাম হোক এই দরকারি জিনিসটার, যাতে গ্রামের মেয়েগুলো থেকে শুরু করে সব মেয়ের হাতে স্বল্প আর সাধ্যের মধ্যে পৌঁছে যায় এই অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটা।
আমাদেরও একজন প্যাডম্যান অরুণাচলম মুরুগানান্থম প্রয়োজন। আর সেই প্যাডম্যান হউক আমাদের সরকার। সেজন্য প্রয়োজন বিনামূল্যে নয় বরং সরকারের উদ্যোগে স্বল্প খরচে প্যাড উৎপাদন ও বিক্রি। এইভাবেই সকল মেয়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ নয় বরং হাসি ফুটুক এই বিশেষ দিনগুলোতে।
অন্তত মেয়েগুলো দিন শেষে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে না পড়ুক।