নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য কারো সাথে বিশেষ করে আমার পরিবারের সাথে এইভাবে যুদ্ধের মাঠে দাঁড়াতে হবে, এ কথা ফেলে আসা দিনগুলোতে কখনো ভাবিনি। সত্যি বলতে যেসব প্রশ্ন নিয়ে আজকাল ভাবি, তা-ও আগে কখনো মনে হয়নি। যেমন :
ব্যক্তি স্বাধীনতা কী?
কেন প্রয়োজন?
না পেলেই বা ক্ষতি কী?
একজন মেয়ে মানুষের কি সত্যিই স্বাধীনতা থাকতে পারে?
এসব কি আদৌ সম্ভব?
যখনই এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছি পরিবারের কাছে, বাবা-মায়ের কাছে, আমার শিক্ষকদের কাছে, তাদের উত্তর শুনে মনটা দমে যেত।
তাদের ধারণা, মেয়েদের জীবনে এসব থাকতে নেই! যারা এসব করে, তারা ভালো মেয়ে হয়ে উঠতে পারে না। আমিও সেরকমই উত্তর পেতাম।
তাদের এমন ধারণা কোথা থেকে জন্মালো?
তারা এমনভাবে কথা বলতেন, যাতে কোনো রকম কৌতূহল না জাগে আমার মনে।
কী এমন চায় একজন মেয়ে, একজন নারী, যার জন্য সামন্তীয় মনোভাবের সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মানুষ তাকে দুশ্চরিত্রা বলতেও দ্বিধাবোধ করে না?
যাতে মনে না হয়, এতে রাষ্ট্রের দায় কতটুকু?
মানুষের পরিচয় অস্বীকার করে, নাগরিক অধিকারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নারী-পুরুষ, ধনী-গরীব, শ্রমিক-মালিক, বাঙালি-অবাঙালি বৈষম্য করে রাষ্ট্রের লাভটা কোথায়?
পরিবার, সমাজ বলেছে, তোমার এসব নিয়ে ভেবে কাজ নেই। নিজের চরকায় তেল ঢালো৷ তারপর আমি নিজের সাথে কথা বলতাম আর ভাবতাম, আমি ভলো মেয়ে। আমি এসব চিন্তা করব না। এ পথে চলতে হবে না। কারণ, আমি তখনো দেখা পাইনি চিন্তার।
যখন থেকে আমি প্রতিদিন বিকেলে ঘর থেকে বেরিয়ে হাঁটতে যেতাম, নদীর ধারে গিয়ে বসতাম, তখন… তখন থেকে তারা আমার কাছে আসা শুরু করেছিল। তাদের সাথে নতুন করে পরিচয় হলো, দেখা হলো। আমার কাছে ভালো হওয়ার সংজ্ঞাটাও পরিবর্তন হয়ে গেলো।
এখন আমি বুঝতে পারি, সমস্যাটা কোথায়?
কারা এসব টিকিয়ে রাখতে চায়?
কেনই বা চায়?
আরো জেনেছি, এই বাধা শুধুই নারীর পথের বাধা নয়। এ বাধা আছে শ্রমিক-কৃষকের বাঁচার পথে, সাধারণ মানুষের, আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের পথে। তারপর আমি জেনেছি কেন, কারা এসব করছে। বুঝেছি, আমার কী করা উচিত। তারপর আমি আর ভালো মেয়ে হয়ে উঠতে পারিনি এই অতিশয় ভালো সমাজে! অবশ্য তাতে আমার কিছুই যায়-আসেনি!
আর আসবে-যাবেও না কোন দিন!
আমার পক্ষে ূও ভালো মেয়ে হওয়া সম্ভব না।১ূ