শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
Homeনারী স্বাস্থ্যপিরিয়ড কি লুকানোর মতো কোন বিষয়

পিরিয়ড কি লুকানোর মতো কোন বিষয়

নরসিংদীর মেয়ে আমি।
গ্রামের একটা স্কুলে তখন নবম শ্রেণিতে পড়ি।
নবম শ্রেণিতে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২ জন মেয়ে আর কয়েকজন ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হয় আমার।
একদিন টিফিন টাইমে আমার পিরিয়ড হয়।
চিন্তিত আমি, তখন ভাবছিলাম, এখন কী করব আমি?
টিফিন টাইমের পরে ৬ষ্ঠ ঘণ্টায় ক্লাস টেস্ট আছে। এখন তো ছুটি নিয়ে চলে যাওয়াটাও ঠিক হবে না। তারপর ভাবলাম, একজন ছেলে বন্ধুকে দিয়ে কি প্যাড আনানো যায়? একজনকে বললাম, আমাকে একটা জিনিস এনে দিতে হবে। তখন সে জানতে চাইলো,
“কী এনে দিতে হবে?”

আমি একটু সংকোচ বোধ করছিলাম। পরক্ষণেই আমার মনে  হলো, এটা তো লুকানোর মতো কোন বিষয় না। আমি বললাম, আমাকে প্যাড এনে দিতে হবে। তারপর সে বলল, লিখে দে কোনটা আনতে হবে। আমি লিখে দেওয়ার পর সে আমার সাইকেল নিয়ে বাজারে গেল।

আমাদের স্কুল থেকে বাজার অনেকটা দূরে। তাই তার আসতে দেরি হচ্ছিল। টিফিনের পর আমাদের ৩ টা ক্লাস হয়। কিন্তু ওইদিন আামাদের বিজ্ঞান বিভাগের দুইটা ক্লাস আগেই হয়ে গিয়েছিল। তাই আমাদের ক্লাস টেস্টের পর আমরা যারা বিজ্ঞান বিভাগের, তারা ছুটি পেয়ে গেলাম। বন্ধুটি তখনো বাজারেই ছিল। তার জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করছিলাম। বেশ কিছু সময় পার হয়ে যাওয়ার পর আমার সাথের সহপাঠীরা আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, তাকে কী আনতে পাঠিয়েছি?
আমি বললাম, তেমন কিছু না।
তখন ওরা বলতে লাগলো, “এমন কী কথা, যা তুমি আমাদের বলতে পারবা না, অথচ ওকে বলতে পারবা?” আমি বললাম, ওরকম কিছু না।
তখন ওদের মধ্যে একজন বলল, “ওকে কি প্যাড আনতে পাঠিয়েছো?”
আমি বললাম, না। ওদেরকে এ বিষয়টা জানানোর কোন ইচ্ছেই ছিল না। কারণ ওরা আমার বন্ধু হতে পারে, তবে বিষয়টাকে সহজভাবে নেওয়ার মতো বন্ধু নয়। তারপর ওরা চলে গেল।

আমি অনেকটা পথ হেটে আসার পর একটা অটোরিক্সা পেলাম। সেটা দিয়ে বাড়ি চলে এলাম। আমি বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পরেই বন্ধুটি সাইকেল নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে এলো। তখন সে জানালো, আমাকে না পেয়ে প্যাড বাড়িতে রেখে এসেছে। বিকেলে দিয়ে যাবে। বিকেলে এসে সে আমাকে প্যাকেটটা দিয়ে চলে গেল। তখন আমাদের দুজনের মধ্যে বেশি কথা হয়নি। পরদিন স্কুলে যাওয়ার পর তাকে আবারো ধন্যবাদ জানালাম।

কয়েক দিন পর দশম শ্রেণির মেয়েরা আমাকে আলাদা করে ডেকে জিজ্ঞেস করে, “ওকে দিয়ে কী আনিয়েছ?”
আমি বললাম, তখন যেটা আনানোর দরকার ছিল, সেটাই আনিয়েছি। এরপর ওরা আমাদের স্কুলের  একজন শিক্ষিকার কাছে গিয়ে বিচার দেয়। কোথায় ম্যাডাম বলবেন যে, এটা বিচার দেয়ার কী আছে? এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়। তা না করে উল্টো উনি তাদেরকে বললেন, উনি নিজেও নাকি প্যাড নিয়ে সহপাঠী বন্ধুকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। এবং এটা দেখে নাকি উনার লজ্জা করছিল। আর আমার যে সহপাঠী জানতে চেয়েছিল, বন্ধুকে দিয়ে প্যাড আনিয়েছি কি না, সে তার মুখে যা আসে, তাই বলে অপমান করেছে আমাকে। সহপাঠী ছেলে বন্ধুটিকেও অপমান করতে বাকি রাখেনি।

“যার লজ্জা-শরম নাই, তার দুনিয়াতে কিছু নাই…
মাইয়ামাইনষেরা জানো, কারে দিয়া এগুলা আনায়? বাবাকে দিয়ে, নয়তো স্বামীকে দিয়ে। আর আমি তো আমার বাবারেও বলতাম না।”
এমনই আরো অনেক কিছু!
তখন আমি বললাম, সে তো সহপাঠী, বন্ধু। আমার ভাই। আর তোমার কি মনে হয়, তোমার সচেতনতাবোধ আমার মায়ের চেয়ে বেশি? আমার মা দেখেছে, সে আমার জন্য প্যাড বাড়িতে নিয়ে এসেছে। মা তো আমাকে কিছু বলেনি। আর এটা বলার মতো কোন বিষয়ও নয়। এতো যে জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব দেখাচ্ছো, তোমার কোন দিক দিয়ে সমস্যা হচ্ছে?

আমি বাড়িতে ফিরে আসার পর নিজেকে কেমন একটা অপরাধী মনে হতে লাগলো। তবে আমার মধ্যে তখনো একটা বোধ কাজ করছিল যে, আমি কোন ভুল করিনি, অপরাধ করিনি। ওরা ভুল, ওদের মেন্টালিটি ভুল। আমি খুব ভালো করেই জানতাম, যতক্ষণ না আমার বোনদেরকে সব খুলে বলব, ততক্ষণ আমার ভালো লাগবে না। বাসায় এসে আগে বাবার ফোন দিয়ে বড় বোনকে সব খুলে বললাম।

আপু আমাকে বোঝালেন, সাহস জোগালেন। এবং বললেন, ওই শিক্ষককে জিজ্ঞেস করতে, এতে কোন ভুল আছে কি না?
আমি পরদিন স্কুলে গিয়ে ওই ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি কোন লুকানোর মতো বিষয়? এটা একটা প্রাকৃতিক বিষয়। এটা না হলে আপনিও আসতেন না, আমিও আসতাম না। এ পৃথিবীতে কোন মানুষই আসতো না। আর ম্যাডাম, আপনি একজন শিক্ষক হয়ে যদি বলেন যে, এটা লজ্জার বিষয়, তাহলে আমরা কী শিখব? আপনার উচিত আমাদেরকে এ বিষয়ে সঠিক শিক্ষা দেওয়া। সঠিক পথ দেখানো। একজন শিক্ষক হিসেবে অন্তত আমি আপনার কাছে এটা আশা করিনি। আমার এসব কথা শুনে উনি অবশেষে বলেন,
“না, আমি তো ওদেরকে বলেছি যে, কোন সমস্যা নাই। ওরা তো বাড়ির মানুষই।”

ম্যাডামকে কথাগুলো বলতে পেরে অনেকটা হালকা অনুভব করছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমি যা করেছি এবং বলেছি, ঠিকই করেছি। কেউ ভুল ধারণা নিয়ে থাকলে তাকে তো সঠিকটা জানাতে হবে। তারপর ক্লাসে এসে আগে সহপাঠী বন্ধুর সাথে হ্যান্ডশেক করলাম এবং বললাম, আর কোনো সমস্যা নেই।

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাম্প্রতিকা