সম্প্রতি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সরকারি চাকুরির আবেদন ফি সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা জানি, সকল সরকারি চাকরির আবেদনের ফি পরিশোধ করতে হয় রাষ্ট্রীয় টেলিফোন অপারেটর ‘টেলিটক’-এর মাধ্যমে। ২৪ আগস্টের এই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয় যে, সরকারি চাকুরির জন্য অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফি-এর উপর টেলিটকের যেই ১০% কমিশন, তার উপরেও আরোপিত হবে ১৫% ভ্যাট।
২২ সেপ্টেম্বর ২০২২-এ অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে মাশুলের নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে প্রথম শ্রেণির অর্থাৎ নবম গ্রেডের চাকরির জন্য ৬০০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণির অর্থাৎ দশম গ্রেডের জন্য ৫০০ টাকা, ১১ এবং ১২ গ্রেডের জন্য ৩০০ টাকা, ১৩ থেকে ১৬ গ্রেডের জন্য ২০০ টাকা এবং ১৭ থেকে ২০ গ্রেডের জন্য ১০০ টাকা আবেদন ফি-এর পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া হয়। উপরন্তু, অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডকে কমিশন বাবদ ১০% টাকা প্রদান করতে হতো চাকুরি প্রার্থীদের।
সেই চাকরির আবেদন ফি’র কাঠামো নিয়েই ছিল নানা প্রশ্ন, অসন্তোষ এবং প্রতিবাদ। এসবের মাঝে নতুন করে এই ভ্যাট আরোপের নীতিমালা বেকার চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য যেন গোঁদের উপর বিষফোঁড়া। প্রথম শ্রেণির একটি পদে আবেদন করতে একজন চাকরিপ্রার্থীর বর্তমানে ৬০০+৬০০ এর ১০% বা ৬০+৬০ এর ১৫% বা ৯ টাকা অর্থাৎ সর্বসাকুল্যে ৬৬৯ টাকা পরিশোধ করতে হবে, যা পূর্বের তুলনায় ৯ টাকা বেশি।
দেশের চাকরির বাজারের বেহাল দশা কারোরই অজানা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে ২০-২৫ টি পদের বিপরীতে আবেদন পড়েছে লাখ খানেক। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একজন চাকরিপ্রার্থীর চাকুরির আবেদন বাবদ প্রতি মাসে তিন-চার হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে যায়। উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর বেকার তরুণ-তরুণীরা টিউশন করিয়ে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি এই সকল আবেদন করে থাকে। অথচ দিনশেষে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যল্প।
যেখানে নাগরিকদের কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য বলে সংবিধান বলছে, সেখানে উল্টো বেকার, অসহায় তরুণদের থেকে চাকরির আবেদন ও পরীক্ষা ফি’র নামে রাজস্ব আদায়ের নিত্য নতুন ফন্দি আঁটছে সরকার। তরুণদের বেকারত্ব সরকারের জন্য শাপে বর হয়ে দেখা দিয়েছে। বেকারত্ব হয়ে উঠেছে তাদের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম উৎস।
ক্যাপিটালিজমে কোন কোম্পানি যখন ব্যবসা করতে নামে, তাদের প্রথম, প্রধান এবং একমাত্র লক্ষ্য উদ্দেশ্যই থাকে কীভাবে এবং কত দ্রুত বাড়তি মুনাফা অর্জন করবে। ক্রেতার সুবিধা-অসুবিধা, বাঁচা-মরা তাদের বিবেচ্য বিষয় থাকে না। বাংলাদেশ নামক দেশটির চালকরাও ভ্যাট, ট্যাক্স, কমিশন সংক্রান্ত তাদের আইন, বিধিমালা প্রণয়ন করছে বেকার তরুণ এবং তাদের অসহায় পিতা-মাতার কথা পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে। তারা একই গরুকে ৩ বার জবাই করার মতো একই চাকরির একই পদের আবেদনের জন্য ৩ বার ৩ নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ১ বার পরীক্ষা ফি’র নামে, ১ বার কমিশনের নামে নিজেদের মোবাইল কোম্পানি টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে এবং ১ বার কমিশনের উপর ভ্যাটের নামে।
তাহলে কি আমরা ধরে নিবো, বাংলাদেশ একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি? যদি তা না হয়, তাহলে সরকারের উচিত আবেদন ফি, কমিশন, ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে রাষ্ট্রীয় খরচে নিজেদের জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। নিত্য নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে বেকার তরুণদের বেকারত্ব লাঘব করা।
লেখক : একজন চাকরিপ্রার্থী