এমন একটা বাজার চিন্তা করতে কেমন লাগে, যেখানে সব বিক্রেতা নারী। কোন ইভটিজিং হচ্ছে না। স্লিভলেস পোশাকের জন্য কোন কটাক্ষের শিকার হতে হচ্ছে না। কোনো কোনো নারী মনের সুখে তামুক পান করছেন!
আমাদের সমতলে এমন চিন্তা অবান্তর। বছর দুয়েক আগে আমাদের রেলস্টেশনে ছোটপোশাক পরিহিতা একজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ের উপর যা ঘটেছে, সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই অবগত আছেন অনেকে। এছাড়া কয়েক মাস ধরে প্রতি শনিবারে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন পৌর পার্কে স্থানীয় নারী উদ্যোক্তাদের সাপ্তাহিক পন্য-প্রদর্শনী ও বিক্রয় মেলা বসছে। ছুটির দিনে সারা দিনের চেয়ে সন্ধ্যার দিকেই মূলত মেলায় লোকজন আসে এবং মেলা জমে ওঠে। কিন্তু সন্ধ্যায় নারী উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে মাগরিবের পরপরই জমে ওঠা এই মেলাকে গুটিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তাই বলা যায়, বঙ্গীয় সমতলের চিন্তাপদ্ধতির ওপর প্রশ্ন এঁকে দিলো, সাজেক ভ্যালির এই ছোট বাজার। এছাড়া পাহাড়ের অন্যান্য হাটগুলোতেও বেশির ভাগ বিক্রেতাই নারী।
তখন বাজে সকাল ছয়টা। কুয়াশার চাদর বিছিয়ে আছে সবুজ পাহাড়ের গায়। সাজেক ভ্যালির নানান রকম রূপের মাঝে অপরূপ হলো সাজেকের সকাল। কোমল, শীতল ও মেঘময়। সূর্যোদয় উপভোগ করতে আমরা চলে গেলাম কংলাক পাহাড়ে। কংলাক পাহাড় হতে ফিরে এসে দেখি বৈচিত্র্যে ভরপুর এই বাজার। পাহাড়ি নারীরা বৈচিত্র্যময় পণ্যের পসরা বসিয়েছেন। অধিকাংশ কৃষিজ পণ্য। যেমন : বাঁশের কোড়ল, হলুদের ফুল, কুমড়া, পাহাড়ি মিষ্টি লেবু, বিন্নিধান ইত্যাদি। বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে কোনো কোনো পাহাড়ি নারী তামুকে সুখটান দিচ্ছেন। জিনিসপত্রের দামও যৌক্তিক। বাঁশের কাপে এককাপ চা হাতে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছিলাম, যেখানে বাঁশ এসে খাদ্য হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন প্রকারের। বাঁশের কোড়লের মধ্যে মুরগী দিয়ে রান্না করেন উনারা। সকালের নাস্তায় মিষ্টি কুমড়ার সাথে কচি বাঁশপাতা ভাজি।
কংলাক পাহাড়ে যাবার পর
মনে হয় যেন এক চিল হয়ে যাই। কখনো মেঘের ওপর
কখনো মেঘ মাঝে উড়ে বেড়াই।
প্রয়োজনে সমতলে যাই
ছুঁ মেরে ফেলে আসি ইঁদুর ব্যাঙের জীবন।
ছবি : সুপ্রিয় চাকমা