“The world is a book and those who do not travel, read only one page.” – Augustine of Hippo
ক্যালেন্ডারের পাতায় ৩ দিনের ছুটি দেখেই, আমরা ট্রাভেল-বাহিনী খুঁজতে থাকি। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল পছন্দের শীর্ষে। একটি ট্রাভেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে ৭ টি সিট কনফার্ম করে ফেললাম। এরপর শুধুই অপেক্ষা!
আমাদের যাত্রা শুরু হয় ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় নরসিংদীর ভেলানগর থেকে। রাস্তায় ভয়াবহ জ্যামের কারনে ডাকতে হয় উবার। পুরো রাস্তায় খেলি মজার সব খেলা। একেক জনকে একসাথে গাইতে হবে ৩ টি করে গান। না পারলে চিপস জরিমানা।
ঢাকার সায়েদাবাদ পৌঁছানোর পর পড়তে হয় এক নতুন বিড়ম্বনায়। কোন কাউন্টারে পাওয়া যায়নি টিকিট। ৩ দিনের সরকারি ছুটি থাকায় বাস কাউন্টারে ছিল প্রচুর ভিড়। আবারও প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করতে হলো, খুলনা- মংলা বন্দরে পৌঁছাতে। রাতের খাওয়া-দাওয়া সারলাম সাম্পান রেস্টুরেন্টে।
খুলনা থেকে সুন্দরবনগামী জাহাজ ছেড়ে যায় ভোর ৬ টায়। জাহাজ থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো, আগামী ৩ দিন আমরা নদীর বুকে জাহাজেই থাকবো। জাহাজ ছাড়ার ঘন্টা চারেক পরে প্রথম পর্যটন স্পটে পৌঁছাই আমরা। নাম হাড়বাড়িয়া ইক্যুটুরিজম কেন্দ্র। সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। আন্ধারমনিক ইক্যুটুরিজম কেন্দ্র হচ্ছে আর একটি বিশেষ পর্যটন কেন্দ্র। এখানেও হরিন, বানর ও পাখির দেখা মেলে।
২৯ সেপ্টেম্বর জাহাজ পৌঁছায় নতুন গন্তব্যে। জাহাজ থেকে ট্রলারে উঠেে একটি সরু নদী পার হয়ে আমরা নদীর তীরে উঠি। কিছু দূরে হাঁটার পরেই দেখতে পাই এক বিশাল সবুজ বৃত্তাকার মাঠ। মাঠের চারপাশে ঘন জঙ্গল আর উপরে মেঘে ঢাকা সাদা-কালো আকাশ। ট্যুরিষ্ট গাইড থেকে জানতে পারি, এখানেই সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার হরিন শিকার করে। এজন্যই জায়গার নাম টাইগার পয়েন্ট। মাঠ পেরোতেই শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে জঙ্গলের ভেতর জলকাঁদা পার হয়ে পৌছাঁই জামতলা সমুদ্রে সৈকতে। মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে সমুদ্রে সাতাঁর কাটা আর তীরে দৌড় ঝাঁপ। সে এক অন্য রকম অনুভূতি।
নতুন করে পথচলা শুরু কটকা সমুদ্র সৈকতে। বনের মধ্যে কাঠের নির্মিত পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় পরিছন্ন সমুদ্র সৈকতে। আমরা সেখানে যাই দুপুরের দিকে।ততোক্ষনে বৃষ্টি থেমে আকাশ হয়েছে রঙ্গিন। লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে দিগন্তজুড়ে। এখানে কেওড়া বন এবং হরিনের দেখা মেলে। সুন্দরবনের প্রায় সবগুলো স্পটেই দেখা মেলে বানরের।
গোধূলির সময়ে আমরা যাই ডিমের চর। ডিমের চরে নামতেই চোখ জুড়িয়ে যায় রাশি রাশি কাশফুলের সৌন্দর্যে। একপাশে বিস্তীর্ন বালির মাঠ আর সমুদ্র সৈকত। অসম্ভব নির্জন এই বেলাভূমিতে দাঁড়ালে অসীম মহাবিশ্বের কাছে নিজেকে অনেক ক্ষুদ্র মনে হয়। প্রকৃতির অপরুপ রূপও গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়। নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয়েছিলো, এখানে এসে প্রকৃতির নৈসর্গিক রুপ দেখতে পেরে।
আমাদের সর্বশেষ গন্তব্য ছিলো করমজল। খুলনা থেকে সবচেয়ে কাছের স্থান হলো, এ পর্যটন কেন্দ্রটি। তাই ফেরার দিন আমরা যাই করমজলের সৌন্দর্য্ উপভোগ করতে। হরিন, কুমির, বানর চোখে পড়ে জায়গায় জায়গায়। রয়েছে কাঠের তৈরি পুল, যেখান থেকে সুন্দরবনের সবুজ বন প্রত্যক্ষ করা যায়।
সুন্দরবনে ভ্রমনের কথা শুনলেই সবার আগে বাঘ মামার কথা মনে পড়ে। কিন্তু আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন, বাঘ মামাদের কোথাও পাবেন না। তারা লুকিয়ে থাকে জঙ্গলে। তাদের পদচিহ্ন এবং সুন্দরবনের খাঁটি মধু নিয়ে আমরা ফিরে এলাম নিজ নিজ গন্তব্যে। সাথে একরাশ ভলো লাগার স্মৃতি।