মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪
Homeপ্রস্তাবনা'নারী অঙ্গন' এর দুই বছর

‘নারী অঙ্গন’ এর দুই বছর

নারীর মুক্তি ও রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নারীদের মধ্যে সিস্টারহুড গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে পরীক্ষামূলকভাবে নারী অঙ্গন ২০২১ সালের ২১ জুন তাদের কার্যক্রম শুরু করলেও অফিসিয়ালি যাত্রা শুরু করে ২০২২ সালের ৮ মার্চ। সেই হিসেবে ৮ মার্চকে আমরা নারী অঙ্গনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হিসেবে গ্রহণ করি। নারী অঙ্গনের বিগত দুই বছরের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো তুলে ধরা হলো,,,

১ । কৃষাণী, গৃহিণী ও শ্রমিক শ্রেণির নারীদের প্রাধান্য দিয়ে নারী অধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি উত্থাপন, প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখন এবং আশু কার্যক্রমের পরিকল্পনা গ্রহণ।

নারী অঙ্গনের ১২ দফা প্রস্তাবনা

২। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান:
২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর আমরা “বেগম রোকেয়া স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি-২০২১” নামে শিক্ষাবৃত্তির কার্যক্রম গ্রহণ করি নরসিংদী জেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও কলেজে পড়া নারী শিক্ষার্থীদের জন্য। প্রায় দুই মাস নারী অঙ্গনের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সহযোগিতার ফলে ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পৌর পার্কে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা ৬০ জন নারী শিক্ষার্থীর হাতে ২ হাজার টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি তুলে দিয়েছি। এক্ষেত্রে আমরা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিয়েছি।

 

৩। নিয়মিত পাক্ষিক পাঠ আড্ডা কার্যক্রম পরিচালনা:
আমাদের যাত্রার শুরু থেকেই নিজেদের, নিজেদের চারপাশ ও জগৎ সম্পর্কে জানতে- বুঝতে বই কেনা ও পাঠকে গুরুত্বের সাথে দেখে এসেছি। সেজন্য প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর নির্ধারিত বই পড়ে সেই বইয়ের উপর উন্মুক্ত আড্ডা দিয়ে থাকি। ২০২২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শিক্ষা’ প্রবন্ধ দিয়ে যাত্রা শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি পাঠ আড্ডা করেছি আমরা। আড্ডাগুলোর বেশির ভাগই পার্ক, স্টেশনের প্লাটফর্ম, কলেজ মাঠ ইত্যাদি পাবলিক প্লেসে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

৪। “নারী অঙ্গন” নামে অনলাইন পোর্টাল পত্রিকা প্রকাশ: নারী অঙ্গন, নিজেদের চোখে দেখে, শ্লোগান নিয়ে ২০২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নাদিরা ইয়াসমিনের সম্পাদনায় আমাদের অনলাইন পোর্টাল পত্রিকার যাত্রা শুরু হয়। নিচে পত্রিকার লিংক দেওয়া হলো:

Home

৫। রোকেয়া মাস উদযাপন: ২০২২ সালে ডিসেম্বর মাসব্যাপী রোকেয়ার লেখা, চিন্তা, কর্ম নিয়ে “রোকেয়া মাস” পালন করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এই মাসের সবগুলো আড্ডা রোকেয়ার গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলোর উপর হয়েছে। প্রতিদিন নারী অঙ্গনের বন্ধুরা রোকেয়ার লেখা পাঠ করে আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ ও পেইজে পাঠ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখা, অডিও, ভিডিও পোস্ট করেছেন। এর ফলে রোকেয়াকে নিবিড়ভাবে পাঠ, পর্যালোচনার সুযোগ হয়েছে আমাদের।

৬। নারী অঙ্গন সাইক্লিং ক্লাবের কার্যক্রম শুরু: ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর নারী বন্ধুদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট, আত্মবিশ্বাস তৈরি ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ‘নারী অঙ্গন সাইক্লিং ক্লাব’ এর যাত্রা শুরু হয়। গত দুই মাসে আমরা প্রায় ৭০ জন বিভিন্ন বয়সী নারী বন্ধুকে সাইকেল চালানো শেখাতে পেরেছি।

(

৭। নরসিংদীতে স্থানীয় পর্যায়ে নারী ইস্যুতে নারী অঙ্গনের সাহসী অবস্থান গ্রহণ: বছর দুয়েক আগে নারী অঙ্গনের যাত্রা শুরুর কিছুদিন পরই নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকা থেকে আগত এক তরুণীর উপর পোশাককে কেন্দ্র করে ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনা ঘটার পরও দীর্ঘদিন ধরে নরসিংদীতে কাজ করে যাওয়া রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠনগুলো ছিল বোবার মতো নিরব। কিন্তু নারী অঙ্গন ঘটনার কথা জানার সাথে সাথেই কোন রকম দ্বিধা না করে, ভীত না হয়ে এই ধরনের অসাংবিধানিক, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে প্রতিবাদ জানিয়েছে, লেখালেখি করেছে। এর ফলে এই ঘটনাকে যারা সমর্থন দিয়েছিল, গ্লোরিফাই করেছিল তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। পরবর্তীতে একটা রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেত্রীর মাধ্যমে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে উস্কে দেওয়া হলে আবারও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। তখনও নারী অঙ্গন সরব ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় নারী অঙ্গনের বন্ধুরা নারী ইস্যুতে ব্যক্তিগতভাবে, দলবদ্ধভাবে অনলাইন, অফলাইন বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছে। একটা গোষ্ঠী নরসিংদীর অনলাইন গ্রুপগুলোতে প্রতিনিয়ত নারী বিদ্বেষী, নারী বিরোধী প্রচার প্রচারণা করতো। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নারী অঙ্গন এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করে এসেছে। এর ফলে এসব কর্মকাণ্ড অনেকটা বন্ধ হয়ে এসেছে।

৮। জাতীয় পর্যায়ে নারী ইস্যুতে নারী অঙ্গনের অবস্থান গ্রহণ: জাতীয় পর্যায়ে গৃহকর্মী, গৃহিণী, শ্রমিক, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং তাদের উপর ঘটে চলা হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে পেইজে, গ্রুপে ও পোর্টালে প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে প্রতিবাদ ও সরব আওয়াজ জারি রেখেছে নারী অঙ্গন।

প্রীতি উরাংই যেন শেষ জন হয়

৯। নারী বন্ধুদের প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখার স্বপ্ন থাকে। কিন্তু নানা বাস্তবতার কারণে তারা অনেক সময় সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন না। কাছাকাছি প্রেক্ষাগৃহে দলবদ্ধভাবে আমাদের নারী অঙ্গনের বন্ধুদের নিয়ে ‘হাওয়া’, ‘পরান’ ‘সুড়ঙ্গ’ এর মতো আলোচিত সিনেমা দেখাসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ জারি ছিল।

১০। স্বল্প পরিসরে আইনি পরামর্শ ও আইনি সহায়তা প্রদান: নারী অঙ্গনের আইনজীবী বন্ধু এডভোকেট সাবিকুন্নাহারের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে স্বল্প পরিসরে আইনি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে আইনি সহায়তা দিয়েছে নারী অঙ্গন। ভবিষ্যতে এই কার্যক্রমকে বৃহত্তর পরিসরে সম্প্রসারনের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

১১। জাতীয় বাজেট নিয়ে বিশেষ পাঠ আড্ডার আয়োজন: নারী বন্ধুদের রাজনৈতিক অর্থনীতি সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলে সচেতনতা বৃদ্ধি কারার উদ্দেশ্যে এবং জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাজেটের প্রভাব সম্পর্কে অবহিত করতে ২০২৩-২৪ সালের বাজেট নিয়ে নারী পুরুষ উভয়ের অংশগ্রহণে ১৪ জুন উন্মুক্ত পাঠ আড্ডার আয়োজন করা হয়।

১২। নরসিংদী জেলার নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের  (বীরাঙ্গনাদের) সম্পর্কে অনুসন্ধান, যোগাযোগ এবং ২০২২ সালে মার্চ থেকে পুরো ডিসেম্বর পর্যন্ত বছরব্যপী এ সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ে নারী অঙ্গন গ্রুপ ও পেইজে লেখালেখি করা হয়েছে। এজন্য সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের তখনকার মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুস্মিতা জাহাঙ্গীর, আজিজুল হক, সুব্রত দাশসহ তাদের কয়েকজন বন্ধুকে ধন্যবাদ।

(

১৩। সারাদেশে সরকারি কলেজে নবনির্মিত ছাত্রী হোস্টেল ও বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের (বীরাঙ্গনাদের) নামে নামকরণের দাবি: সারাদেশে জেলা পর্যায়ের সরকারি কলেজগুলোতে নবনির্মিত ছাত্রী হোস্টেলগুলোর ও বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে নারী অঙ্গনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব ও দাবি উত্থাপন করে বিশেষ প্রচার প্রচারণা করা হয়। এজন্য বিশেষ ( তারিখ) সভার আয়োজন করে নারী অঙ্গনের প্রায় ৫০ জন বন্ধুর উপস্থিতিতে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে  সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

https://www.facebook.com/share/p/XQq2Au2ooVKzDL86/?mibextid=oFDknk

১৪। মাসব্যাপী কার্যক্রমের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান পাঠ ও পর্যালোচনা: নাগরিক হিসেবে নিজেদের নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে জানতে ও সচেতন হতে ২০২২ সালে পুরো আগস্ট মাস জুড়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে নিবিড় পাঠ, আড্ডা, পর্যালোচনা, প্রতিযোগিতা ও অংশগ্রহণকারী বন্ধুদের মধ্য থেকে সেরাদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।

১৫। । নারী বন্ধুদের নিয়ে মেঘনায় দিনব্যাপী নৌভ্রমণ : ২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নারী অঙ্গনের বন্ধুদের নিয়ে মেঘনা নদীতে দিনব্যাপী সফল নৌভ্রমণের আয়োজন ছিল গত দুই বছরের মধ্যে নারী অঙ্গনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। মরিচাকান্দী চরে যাত্রাবিরতি দিয়ে মধ্যাহ্নভোজন, নারী অঙ্গনের কার্যক্রমের পর্যালোচনা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং ফিরতি পথে গান আড্ডায় মেতে ছিলেন নারী অঙ্গনের বন্ধুরা।

১৬। ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ি এবং সুনোর ১০০ বটতলা ভ্রমণ: নারী অঙ্গনের বন্ধুদের নিয়ে ২০২২ সালের ১লা এপ্রিল দিনব্যাপী ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ি পরিদর্শন এবং পাঁচদোনা থেকে অদূরে সুনোর ১০০ বটতলা আনন্দ ভ্রমণ করি।

১৭। চিনাদি বিলে নৌভ্রমণ: নরসিংদী জেলার একটি বিখ্যাত বিল চিনাদি বিল। সুস্বাদু মাছ, পদ্ম ফুল ও স্বচ্চ টলটলে জলের জন্য সুপরিচিত চিনাদি বিল। নরসিংদীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নারী অঙ্গনের বন্ধুদের নিয়ে চিনাদি বিলে ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়।

১৮। নারী উদ্যোক্তা ও গৃহিণীদের নিয়ে বিশেষ আড্ডার আয়োজন: নারীদের ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং গৃহিণী ও গৃহ-ব্যবস্থাপনার কাজকে নারী অঙ্গন কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখে, সে ব্যাপারে নারী উদ্যোক্তা ও গৃহিণী বন্ধুদের নিয়ে বিশেষ আড্ডা ও মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর নারী উদ্যোক্তা বোনদের নিয়ে এবং ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি হয় গৃহিণী বোনদের নিয়ে বিশেষ আড্ডা ও মতবিনিময়।

“তুমি তো কেবল দুইটা কাজই পারো— খাইতে আর ঘুমাইতে”

বিগত সময়ে নারী অঙ্গনের কাছের দূরের যেসব বন্ধু আমাদের কাজের সরাসরি যুক্ত ছিলেন, যারা আমাদের কাজে সমর্থন ও উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন, সেসব বন্ধুসহ আমাদের সকল শুভাকাঙ্ক্ষী, সমালোচকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আপনারা সাথে ও পাশে আছেন বলেই আমরা কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছি, পারছি। সামনের দিনগুলোতেও আপনাদের একই রকম সমর্থন ও সহযোগিতা পাবে বলে নারী অঙ্গন প্রত্যাশা করে।

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাম্প্রতিকা