“স্যার, আমারে মাফ করে দিয়েন! আমি চলে যাইতেছি, স্যার। ১১টা বছর এই অফিসে কাম করছি। আমার জানে আর দেয় না। ২টা পা খালি ফুলে যায়,,,,আমি যাইতে চাইনি, স্যার। আমার কপালডা খারাপ, শরীরে আর কুলায় না! তাই ইনচার্জ স্যার জোর করে রিজাইন দেওয়াইছে।”
বলছিলাম বিগত তিন বছর আগে, অসুস্থতাজনিত কারনে একটি স্বনামধন্য পোশাক কারখানার চাকরি থেকে অপসারিত হওয়া ৩৯ বছর বয়সী রুমানার মা ভানেসা বেগমের কথা। যাওয়ার সময় এইভাবেই কান্নাকাটি করে কথাগুলো বলে গিয়েছেন।
আমাদের একসাথে চাকরির বয়স ৩ বছর।
এই ৩ বছরেই তার সম্পর্কে, তার পরিবার সম্পর্কে সব কিছু জানাশোনা হয়ে গিয়েছিল আমার। আগে আরো একটি কারখানায় কাজ করেছে ৫ বছর। স্বামীহারা সংসারে ৩ মেয়ে সন্তানের জননী ভানেসা বেগম। দুঃখজনক হলেও সত্য, ৩টা মেয়েই তার ছোট ছোট। ৯ বছর আগে তার রিকশাচালক স্বামী মারা যায় অতিরিক্ত মদ্য পান করে। তিন মেয়ে আর নিজের মা’কে নিয়ে একটা ভাড়া বাড়িতে কোন রকম চলছিলো ভানেসার সংসার। কিন্তু বেঁচে থাকার তাগিদে ওভারটাইমসহ ১৪/১৫ ঘণ্টা কাজ করতে গিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম আর পরিবারের দায়ভার কাঁধে নিয়ে ভানেসাকে ৩৯ বছর বয়সেই বার্ধক্যে পৌঁছে যেতে হয়। এবং কাজ করার সামর্থ্য হারাতে হয়।
যার ফলে কোম্পানি বিনা নোটিশে বকেয়া, আর্নলিভ এইসব প্রদান না করেই তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করে। সম্প্রতি তিন বছর পর একজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম, ভানেসার ২টা পা অচল হয়ে গেছে।
প্যারালাইসিস হয়ে ঘরে বন্দী অবস্থায় মৃত্যুর জন্য প্রহর গুনছে।
এই পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় বিদেশ থেকে কাড়ি কাড়ি রেমিট্যান্স এনে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা ভানেসার মতো গার্মেন্ট শ্রমিকরা এইভাবেই হারিয়ে যায়। আর হাজারো ভানেসার শরীরের ঘামের মূল্য, বোনাস, আর্নলিভের টাকা পরিশোধ না করে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে দেশের স্বনামধন্য তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরা।