শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
Homeনারীবাদঅসুন্দর হওয়ার অধিকার: পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর সৌন্দর্য ও বয়োঃবৃদ্ধির মনস্তত্ব

অসুন্দর হওয়ার অধিকার: পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর সৌন্দর্য ও বয়োঃবৃদ্ধির মনস্তত্ব

আমরা যে সমাজে বাস করি, তার কিছু অলিখিত বিধি-নিষেধ রয়েছে, যেগুলো মেনে চলা সামাজিক শিষ্টাচারের অংশ। আমরা প্রায়শই কোনো রকম প্রশ্ন না করেই সেগুলো মেনে নিই। কোমল ও কঠোর উভয় ধরনের বিধি-নিষেধের কথাই বলা যায় এখানে। যেমন, কোনো পুরুষের বেতন কিংবা কোনো নারীর বয়স জিজ্ঞেস করাকে একটা ছোটোখাটো অভদ্রতা হিসেবেই গণ্য করা হয়। মাঝেমাঝে শোনা যায়, কোনো প্রবাসীকে তার পেশা জিজ্ঞেস করাও নাকি এক ধরনের ভদ্রতার খেলাফ। অকারণে কারো বেতন বা বয়স জিজ্ঞেস করা অবশ্যই কোনো ভালো অভ্যাস নয়। কিন্তু এখানে ভাববার বিষয়টা হচ্ছে, এই অলিখিত নিষেধাজ্ঞাগুলোর দ্বারা উপকৃত হয় কে? বা কারা? কোনো নারীকে তার বয়স কিংবা কোনো পুরুষকে তার পেশা জিজ্ঞেস করলে তারা বিব্রতই বা হবেন কেনো? খুব সহজ ভাষায় বললে, এই তথাকথিত শিষ্টাচারের দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয় সমাজ নিজেই। এই সমাজ এমন একটা সমাজ, যেখানে ধর্ম- বর্ণ-গোত্র-লিঙ্গ- পেশা ইত্যাদি ক্ষেত্রে শত শত বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য বিরাজ করছে। প্রতিদিনই জন্ম হচ্ছে নতুন নতুন বৈষম্যের। কিংবা পুরনোর বৈষম্যের জায়গা দখল করছে নতুন বৈষম্য। যে পুরুষের বেতন বেশি, সমাজের চোখে তার মূল্য বেশি হলে অধিকাংশ পুরুষই যে তার পেশা ও বেতন নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগবে, এটাই স্বাভাবিক। ফলে আমরা যখন কারো বেতন, বয়স কিংবা পেশা জিজ্ঞেস না করার বিধান মেনে নিই, তখন আমরা কোনো ব্যক্তিকে যেমন বিব্রত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিই, তেমনি বাঁচিয়ে দিই এই সমাজকেও। সমাজের কদর্য মুখটা আমরা ঢেকে রাখি এইসব শিষ্টাচারের চাদরে। সমাজের অসাম্য ও অবিচার আমরা দেখেও দেখি না। কারণ আমরা চাই যেকোনো মূল্যে বড়ো হতে। আমাদের যারা শোষণ করছে, তাদের মতো বড়ো। শোষক-শোষিতের ভেদ ঘুচিয়ে দেওয়ায় আমাদের কোনো আগ্রহ নেই।

যাই হোক, আমাদের বর্তমান আলোচনা আমরা বয়সের প্রশ্নে নারীর অস্বস্তি ও তার কার্যকারণ খোঁজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবো। বিষয়টি নিয়ে বহু দিন ধরেই কমবেশি আলোচনা হয়ে আসছে। নারীবাদীরা তো বটেই, মনস্তত্ত্ববিদ, এমনকি সমাজবিজ্ঞানীরাও বর্তমান পুঁজিবাদী পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর সৌন্দর্য ও বয়োঃবৃদ্ধির সামাজিক ব্যাকরণ উপলব্ধি করার চেষ্টা করছেন। সৌন্দর্যের মতো একটি আপাত-নিরীহ ও আপাত-নন্দনতাত্ত্বিক ধারণাও যে শোষণের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে এবং বয়োঃবৃদ্ধির মতো একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়াও যে নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদাহ্রাসের কারণ হয়ে উঠতে পারে, বিশ শতকের বহু নারীবাদী তাত্ত্বিক ও বিশ্লেষক এই বিষয়টি নিয়ে যথোপযুক্ত মাথা ঘামিয়েছেন। সিমোঁ দ্য বেভোয়াঁ তাঁর ‘The Second Sex’ বইয়ে বিচ্ছিন্নভাবে হলেও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন এ বিষয়ে। তবে বয়োঃবৃদ্ধির প্রশ্নে নারীর অস্বস্তি ও আতঙ্কের উপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাটি সম্ভবত করেছেন প্রয়াত আমেরিকান লেখিকা সুসান সোনট্যাগ তাঁর সুবিখ্যাত ‘The Double Standard of Aging’ প্রবন্ধে। এই প্রবন্ধসহ নারীর ক্ষমতায়ন এবং সৌন্দর্য ও বয়োঃবৃদ্ধি বিষয়ক তাঁর আরো কিছু রচনা সংকলিত হয়েছে ২০২৩ সালে প্রকাশিত ‘On Women’ গ্রন্থে। আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজে নারীর বাস্তবিক অবস্থা এবং সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের স্বরূপ বোঝার ক্ষেত্রে বইটি আমাদের পক্ষে বেশ সহায়ক হতে পারে।

সুসান তাঁর আলোচনা শুরু করেছেন সেই অভদ্র প্রশ্নটি দিয়েই। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীকে তার বয়স জিজ্ঞেস করাকে আমাদের সমাজে অশিষ্ট আচরণ হিসেবে গণ্য করা হয় কেনো? একজন নারীই বা কেনো বয়সের কথা উঠলে বিব্রত হন এবং অনেক ক্ষেত্রেই তার সত্যিকার বয়স লুকাতে চান? কোনো বাচ্চা মেয়ে বা কোনো বৃদ্ধার ক্ষেত্রে কি আমরা এই প্রবণতা দেখি? একটা নির্দিষ্ট বয়সে পা দেওয়ার পর নারীর বয়স একটা গোপনীয় তথ্যে পরিণত হয় কেনো? সুসান বলছেন, এর কারণ হলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যেসব বৈশিষ্ট্যকে নারীসুলভ হিসেবে গণ্য করা হয়, যেমন- শারীরিক সৌন্দর্য, আনাড়িপনা, অসহায়ত্ব, আত্মসমর্পণ-প্রবণতা, নমনীয়তা ইত্যাদি বয়সের সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই এই বৈশিষ্ট্যগুলো একজন নারী হারাতে থাকে। যেহেতু এই বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যতিরেকে নারীকে সাধারণত আকর্ষণীয় মনে করা হয় না, সেহেতু যতোই বয়স বাড়ে, ততোই একজন নারীর মনে হতে থাকে যে তিনি ধীরে ধীরে সেক্সুয়ালি ডিসকোয়ালিফাইড হয়ে যাচ্ছেন। এই ভয় থেকেই একজন নারী চেষ্টা করেন তার বয়স লুকানোর এবং বয়োঃবৃদ্ধির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে যথাসম্ভব ও যতো দিন সম্ভব রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। একজন পুরুষকে কখনো এই পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হয় না। বয়সের সাথে সাথে যৌন ক্ষমতা হারানোর একটা ভয় তার মধ্যে কাজ করে ঠিকই। কিন্তু যতোদিন তার অর্থ-বিত্ত- ক্ষমতা আছে, ততোদিন সেক্সুয়ালি ডিসকোয়ালিফাইড হওয়ার ভয়ে ভুগতে হয় না তাকে। নারীর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো। একজন নারী যতো ভালো সামাজিক অবস্থানেই থাকুন, তার যতো অর্থ- বিত্ত- ক্ষমতাই থাকুক, বয়স বাড়ার সাথে সাথে আর দশ জন নারীর মতোই তিনিও সেক্সুয়ালি ডিসকোয়ালিফাইড হতে থাকেন (যদি তিনি যথোপযুক্ত অর্থব্যয় করে তার সৌন্দর্য ধরে না রাখেন)। ফলে একজন মধ্যবয়স্ক, স্বনির্ভর (ও বিপত্নীক) পুরুষ বিয়ের বাজারে যতোটা মূল্য পান, একজন মধ্যবয়স্কা ও স্বনির্ভর ( ও বিধবা) নারী তার সিকিভাগ মূল্যও পান না।কারণ শারীরিক সৌন্দর্য ও নারীত্বের মাপকাঠিতে তিনি ততোদিনে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন। এসব ব্যাপার স্মরণে রেখেই হয়তো সিমোঁ দ্য বেভোয়াঁ লিখেছিলেন, “নারীর ব্যক্তিগত জীবন ইতিহাস- কেননা সে আজো বদ্ধ তার নারীধর্মী ভূমিকায়- পুরুষের থেকে অনেক বেশি মাত্রায় নির্ভর করে তার শারীরবৃত্তিক নিয়তির ওপর; এবং এ-নিয়তির বক্ররেখা অনেক বেশি বিষম, অধিকতর অধারাবাহিক পুরুষের নিয়তির বক্ররেখা থেকে। ….পুরুষ যেখানে ধীরে ধীরে বৃদ্ধ হয়, সেখানে নারী হঠাৎ বঞ্চিত হয় তার নারীত্ব থেকে।…”

এই ক্রমাগত নারীত্বহ্রাসের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারীর পক্ষেই একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ। একটা বাচ্চা মেয়ে এই চাপ বোধ করে না, কারণ সমাজের চোখে ও পুরুষের চোখে সে তখনও পূর্ণাঙ্গ নারী হয়ে উঠতে পারেনি। আবার কোনো বৃদ্ধা নারীও সেটা বোধ করেন না, কারণ শারীরবৃত্তিক দিক থেকে তখন প্রাণ ছাড়া তার আর হারানোর কিছু থাকে না। অন্তর্বর্তীকালীন যে সময়টা, অর্থাৎ কৈশোর থেকে মধ্য জীবনে পা দেওয়ার আগ পর্যন্ত যে দীর্ঘ সময়, এই সময়টাতেই নারী তার বয়স ও সৌন্দর্য সম্পর্কে এক তীব্র আত্ম-সচেতনতায় ভোগে। কারণ এই সময়টাতেই তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো (প্রেম, বিয়ে, সন্তানপ্রাপ্তি, চাকুরী, ইত্যাদি) ঘটে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার শারীরিক সৌন্দর্য একটা বড়ো প্রভাবক ও অনেক ক্ষেত্রে প্রধান নির্ধারকের ভূমিকা পালন করে। ফলে এই কালপর্বে নারী তার যাপিত সময়ের একটা বড়ো অংশই ব্যয় করে সৌন্দর্যের বর্ধন ও রক্ষণাবেক্ষণের পিছনে। ‘আমার বয়স বাড়ছে’ এই মামুলি ও অনিবার্য সত্যটির বিরুদ্ধে নারী এক তীব্র মনস্তাত্ত্বিক ও কসমেটিক লড়াই চালিয়ে যায় তার জীবনের একটা বড়ো অংশ জুড়ে। অবশ্য এই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সময় ও সামর্থ্য সব নারীর হয় না। গ্রামের নিম্নবিত্ত নারীরা, কিংবা শহরের শ্রমিক নারীরা নেহাত বেঁচে থাকার জন্যই এতো কায়িক শ্রমের ভেতর দিয়ে যান যে সৌন্দর্যের পরিচর্যা করার সময় তাদের হয়ে ওঠে না এবং অনেক সময় পরিচর্যা করলেও তেমন কোনো লাভও হয় না। এই শ্রেণীর নারীরা বয়োঃবৃদ্ধিকে অনেকটা স্বাভাবিক হিসেবেই মেনে নেন এবং উচ্চ ও মধ্যবিত্ত নারীরা বয়োঃবৃদ্ধি নিয়ে যে ব্যাপক অস্বস্তি ও আতঙ্কে ভোগেন, তা থেকে তারা পুরোপুরি না হলেও অনেকটাই বেঁচে যান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অপেক্ষাকৃত বেশি প্রাচুর্য ও শিক্ষিত সংসর্গের মধ্যে বেড়ে ওঠেও উচ্চ ও মধ্যবিত্ত নারীরা প্রায়শই এক ভঙ্গুর ব্যক্তিত্ব নিয়ে বেড়ে উঠেন। শারীরিকভাবে সুন্দর হিসেবে প্রতীয়মান হওয়ার জন্য তারা তাদের কৈশোর ও যৌবনের একটা বড়ো অংশই কাটিয়ে দেন আয়নার সামনে বসে, বিউটি পার্লারে এবং পোশাকের দোকানে ঘুরে ঘুরে। এর অন্যথা হলে অবশ্য বিপদ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদেরকে ছোটোবেলা থেকেই তাদের রূপ ও রূপের পরিচর্যার ব্যাপারে অনানুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ সমাজ চায় মেয়েরা এক ধরনের নার্সিসিস্টিক অর্থাৎ আত্মরতিব্রতী জীব হিসেবে গড়ে উঠুক। সুসান বলছেন, সমাজের এই মনোবৃত্তি এতোটাই নিষ্ঠুর যে, যে নারী আত্মরতিব্রতী নয়, তাকে যথেষ্ট নারী হিসেবে গণ্য করা হয় না। ফলে শৈশব থেকেই নারীর জীবন হয়ে ওঠে আয়না-কেন্দ্রিক এবং আয়নার এই অত্যাচারকে তাকে সাদরে মেনে নিতে শেখানো হয়। সৌন্দর্য নেহাত প্রকৃতির উপহার হিসেবে উপলব্ধ হয় না আর। বরং সৌন্দর্য হয়ে উঠে নারীর জীবনের এক অনিবার্য সামাজিক বাধ্যবাধকতা।

ফলে দেখা যাচ্ছে যে, নারীর সৌন্দর্যের যে নিরীহ ও প্রায় আধ্যাত্মিক ধারণা আমরা শিল্প-সাহিত্যে সচরাচর পেয়ে থাকি, বাস্তবে তা ততো নিরীহ নয়। বরং নারীর আত্মনির্ভর হওয়ার পথে, সেল্ফ (self) হয়ে ওঠার পথে পুরুষতান্ত্রিক সৌন্দর্য-কাঠামো এক বড়ো প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। এই বিষয়টিও ধ্রুপদী ও সাম্প্রতিক নারীবাদীদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। সুসান সোনট্যাগ তাঁর ‘A Woman’s Beauty: Put-Down or Power Source?’. ‘Beauty: How Will It Change Next’ প্রভৃতি প্রবন্ধে সৌন্দর্যের বৈষম্যমূলক ভূমিকার কথা আলোচনা করেছেন। ‘The Beauty Myth: How Images of Beauty Are Used Against Women’ বইয়ে নাওমি উল্ফ পুরুষতন্ত্রের শোষণের হাতিয়ার হিসেবে সৌন্দর্যের ভূমিকার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। উভয় লেখিকার বক্তব্যের মর্ম আসলে একই। নাওমি উল্ফ বলছেন, নারীকে বশে রাখার জন্য পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যুগে যুগে বহু মিথ তৈরী করেছে এবং নারীরাও সেই মিথ মেনে নিয়েই জীবনধারণ করেছেন। বিশ শতকে ব্যাপক নারীবাদী আন্দোলনসহ বিভিন্ন কারণে পশ্চিমা সমাজে এই মিথগুলো একের পর এক ভেঙে পড়তে থাকে। আদর্শ নারী, আদর্শ গৃহিণী, আদর্শ মা, পতিব্রতা নারী প্রভৃতি মিথের অবনমনের ফলে নারীর বস্তুগত-সাংস্কৃতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এই সংকটের মুখে পুরুষতন্ত্রের দরকার হয়ে পড়েছিলো নতুন একটা মিথ, নারীরা যার স্বরূপ ভালোমতো না বুঝেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নেবে। নাওমি উল্ফ বলছেন, সৌন্দর্যই হলো সেই নতুন মিথ। এখানে বলে রাখা ভালো যে, পুঁজিবাদ ও মুক্তবাজারের সহযোগিতা ছাড়া পুরুষতন্ত্রের পক্ষে এই মিথ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতো না।

এই মিথ কীভাবে কাজ করে? কয়েকটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বুঝা যাবে। যেমন, আমাদের দেশের মেয়েরা দীর্ঘকাল ধরে ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’, ‘ক্লিন অ্যান্ড ক্লিয়ার’ প্রভৃতি কসমেটিক ব্যবহার করে আসছে একটু ফর্সা হওয়ার জন্য। তারা ফর্সা হতে চায় কেনো? সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই আমরা নববধূর সাজে সজ্জিত মেয়েদের ছবি নিয়ে ট্রল পোস্ট দেখতে পাই। সেখানে ‘আটা-ময়দা’ মেখে শাদা হওয়া নববধূর মুখের রঙের সঙ্গে গায়ের রঙের তুলনা করে নোংরা ঠাট্টা-তামাশার আসর বসানো হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, নববধূরা কেনো বিশেষ করে মুখটাকেই একটু ফর্সা করে তুলে ধরতে চান? ২০২১ সালে প্রথম আলো পত্রিকায় ‘কালো, তবু সুন্দর’ শিরোনামে একটি আপাত-নারীবাদী, সান্ত্বনাধর্মী প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিলো। এই শিরোনামে ‘তবু’ শব্দটি ব্যবহারের কারণ কী? এর তাৎপর্যই বা কী? কোনো ‘সুন্দরী’ নারী যখন শিক্ষাদীক্ষায় কিংবা পেশাগত জীবনে উৎকর্ষ লাভ করেন, তখন আমরা ‘বিউটি উইথ ব্রেইন’ বলে তার প্রশংসা করা শুরু করি। এখানেও একটা প্রশ্ন ওঠে, বিউটি আর ব্রেইনের মধ্যে কি এমন কোনো স্বাভাবিক বিরোধ আছে, যার অন্যথা না হওয়া পর্যন্ত কোনো নারী ‘বিউটি উইথ ব্রেইন’ হতে পারেন না? এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে, যদি আমরা রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক হাতিয়ার হিসেবে বিউটি মিথের ব্যবহারের বিষয়টা একটু খতিয়ে দেখি।

বিউটি মিথের মূল ভিত্তি হলো এক তথাকথিত আদর্শ ও নৈর্ব্যক্তিক সৌন্দর্যের (objective beauty) ধারণা। এই ধারণা মোতাবেক, মানুষের এমন কিছু সুনির্দিষ্ট শারীরিক বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলো দেশ-কাল-পাত্র ভেদে সবার চোখেই সুন্দর হিসেবে প্রতিভাত হয় এবং এই শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলোর আংশিক বা সম্পূর্ণ অনুপস্থিতির ফলে মানুষ কমবেশি ‘অসুন্দর’ হয়ে ওঠে। যেমন, পুরুষ-নারী নির্বিশেষে শাদা চামড়াকে আমাদের সমাজে শারীরিক সৌন্দর্যের একটি প্রায় আবশ্যিক উপাদান মনে করা হয়। শারীরিক উচ্চতা কিংবা নির্মেদ দেহও অনেকটা একই কাতারে পড়ে। এখানে সমস্যা হলো, অবজেক্টিভ বিউটির এই ধারণা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হলেও সেটা একজন নারীর জীবনকে যেভাবে ও যতোটা নিয়ন্ত্রণ করে, একজন পুরুষের জীবনকে সেটা ঠিক সেইভাবে ও ঠিক ততোটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এর কারণ হলো, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে শারীরিক সৌন্দর্য পুরুষের অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে পরিগণিত হলেও সেটাই তার প্রধান যোগ্যতা নয়। পুরুষের পেশা, বেতন, সামাজিক মর্যাদা, অর্থ-বিত্ত কিংবা ক্ষমতাই সমাজে পুরুষের অবস্থান নির্ধারণ করে দেয় এবং এই যোগ্যতাগুলো থাকলে শারীরিক অসৌন্দর্য পুরুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও যৌন জীবনে তেমন কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন নারীর প্রধান যোগ্যতা হলো তার শারীরিক সৌন্দর্য। সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে যে নারী পিছিয়ে থাকেন, অন্যান্য যোগ্যতা থাকলেও প্রায়শই তিনি সমাজের মনোযোগ ও সুনজর থেকে বঞ্চিত হন। প্রেম, বিয়ে, ক্যারিয়ার- সব ক্ষেত্রেই নারীকে সুন্দর হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামতে হয় এবং এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে গিয়ে একজন নারী সৌন্দর্যের ঠিক সেই মাপকাঠি মেনেই অগ্রসর হন, যে মাপকাঠি ঠিক করে দিয়েছে পুঁজিবাদী পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। নারী চায় ফর্সা হতে, ত্বক মসৃণ রাখতে, দেহ টানটান রাখতে। বয়সের স্বাভাবিক চিহ্ন যাতে শরীরে ফুটে না ওঠে, নারী সে ব্যাপারেও সচেতন থাকে। এবং নারীর এই সৌন্দর্য-সচেতনতার সুযোগ নিয়ে বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা চালায় কসমেটিক্স কোম্পানিগুলো। এই কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফার স্বার্থেই বাজারে এক অবজেক্টিভ বিউটির ধারণা চালু রাখে। আমরা প্রতি মুহুর্তে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর বিজ্ঞাপন দেখি, নাটক-সিনেমায় তারকাদের সুন্দর মুখ ও কমনীয় ফিগার দেখি, ফ্যাশন-শো দেখি, রাস্তার বাঁকে বিশাল সাইনবোর্ডের বাঁকে নুডলস-বলপেন-গ্যাসের চুলা প্রভৃতি পণ্যের বিজ্ঞাপনে এক বা একাধিক সুন্দর, ফর্সা নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। এবং মনের অজান্তেই আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা শুরু করি যে, একেই বলে সৌন্দর্য, একেই বলে কমনীয়তা। কোনো এক অসম্ভব মুহূর্তে যদি সারা পৃথিবীর নারীরা সুন্দর হওয়ার এই কু-প্রতিযোগিতায় নামা বন্ধ করে দেন, তো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বহুজাতিক কসমেটিক্স কোম্পানিগুলোই (বিউটি পার্লার বলে কোনো জিনিসও থাকবে না তখন)। ফলে এই কোম্পানিগুলোর কাছে সৌন্দর্য কোনো নান্দনিক ধারণামাত্র নয় বরং সৌন্দর্য হলো তাদের অস্তিত্বরক্ষা ও অঢেল মুনাফার স্বার্থে চালু থাকা এক অত্যাবশ্যকীয় বাণিজ্যিক প্রকল্প। অর্থাৎ, সৌন্দর্যের প্রশ্নে পুরুষতন্ত্র আর পুঁজিবাদ হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে। মজার বিষয় হচ্ছে, পুঁজিবাদী সমাজের আর সবকিছুর মতোই সৌন্দর্যেরও একটা শ্রেণীচরিত্র আছে। সমাজের উচ্চবিত্ত নারীরা, যারা এসি গাড়িতে চলাফেরা করেন, কায়িক পরিশ্রম করেন না, রোদে হাঁটাহাঁটি করেন না, আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে চামড়ার রং শাদা রাখা তাদের পক্ষেই সম্ভব এবং তারাই সচরাচর একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাদের সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারেন। নিম্নবিত্ত নারী কিংবা গ্রামের পরিশ্রমী মধ্যবিত্ত গৃহিণীর পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। ফলে রোদে-পোড়া ত্বক আমাদের ভালো লাগে না। আমরা কামনা করি মসৃণ, সুন্দর, সাদা চামড়া এবং এই সাদা চামড়া যাদের আছে, আমরা তাদের মতো সুন্দর হতে চাই তো বটেই, আমরা গোপনে গোপনে তাদের মতো বড়োলোকও হতে চাই। ‘Beauty: How Will It Change Next’ প্রবন্ধে সুসান সোনট্যাগ সৌন্দর্যের শ্রেণীচরিত্রের উপর বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

পুঁজিবাদ ও পুরুষতন্ত্র—উভয়েরই হাত অনেক লম্বা। আমরা প্রায়শই না বুঝেই এই দুইয়ের অনুশাসন মেনে চলি। কারণ আমাদের পরিবার-পরিজনও আমাদেরকে একই অনুশাসন শিক্ষা দেয়, একই পরিবারের এক মেয়ের সৌন্দর্যের সঙ্গে আরেক মেয়ের সৌন্দর্যের তুলনা করেন আমাদের মুরুব্বি আন্টিরা। আবার নিজের গায়ের রং কালো হলেও একজন মা কখনোই চান না যে, তার মেয়েও তার মতো কালো হোক। ফলে জন্মগতভাবেই যেসব মেয়ের গায়ের রং চাপা, তাদের অনেকেই ছোটো বেলা থেকেই এক মারাত্মক হীনম্মন্যতা নিয়ে বেড়ে ওঠে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে তাদের গায়ের কালো রং যথাসম্ভব ঢেকে রাখতে। এ ক্ষেত্রে তারা বিশেষ যত্ন নেয় তাদের চেহারার উপর, কারণ নারী কতোটা ‘সুন্দর’, তা বিশেষ করে বোঝা যায় তার মুখের দিকে তাকালে। নারীরাও এই জিনিসটি জানেন, ফলে শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর তারা যতোটা মনোযোগ দেন, তার চেয়ে অস্বাভাবিকরকম বেশি মনোযোগ তারা দেন তাদের চেহারার উপর। সুসান সোনট্যাগ খুব স্পষ্ট ভাষায়ই লিখেছেন, ‘By contrast, a woman’s face is potentially separate from her body. She does not treat it naturalistically. A woman’s face is the canvas upon which she paints a revised, corrected portrait of herself….Her face is an emblem, an icon, a flag.’ কিন্তু একজন সৌন্দর্য-সচেতন নারী যখন তার দেহ (body) বাদ দিয়ে কেবল চেহারা (face) নিয়েই পড়ে থাকেন, তখন একজন সৌন্দর্য-সচেতন পুরুষ তার মনোযোগের বৃহত্তর অংশ ব্যয় করেন দেহগঠনের (body) উপর। চেহারা যদি তেমন ভালো না-ও হয়, তবু পুরুষ তার পেশীবহুল শরীর, সিক্স প্যাক, প্রভৃতির মাধ্যমে সুদর্শন হয়ে উঠতে পারেন। এটাও একটা বড়ো বৈশিষ্ট্য পুরুষতান্ত্রিক সমাজের। এখানে আদর্শ নারী দেহ মানেই কোমল, ভঙ্গুর ও নড়োবড়ো নারীদেহ। এই দেহ নিয়ে শক্ত কোনো কাজ করা যায় না এবং যথেষ্ট কায়িক শ্রমের প্রয়োজন হয়, এমন  অধিকাংশ পেশা থেকেই নারীকে নেহাত দৈহিক কারণেই পিছিয়ে আসতে হয়। সমাজের চাওয়াও অবশ্য সেটাই। এই সমাজে একজন আদর্শ নারী মাত্রই সুন্দর, আনাড়ি, আনকোর ও আত্মমুগ্ধ এক জীব, যার কেবল শারীরিক সৌন্দর্য ও সন্তান-সন্ততি ছাড়া সমাজকে, তথা পুরুষকে দেবার মতো কিছুই নেই। তাকে গড়েই তোলা হয়েছে এমনভাবে যে, সে নিজের শারীরিক সৌন্দর্য ধরে রাখার ব্যাপারে যতোটা সচেতন থাকে, নিজের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ক্ষেত্রে ততোটা সচেতন থাকতে পারে না। এরকম একটা সমাজে ‘বিউটি উইথ ব্রেইন’ মানেই এক সুখকর দুর্ঘটনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় কারণে-অকারণে বারংবার ব্যবহৃত হতে হতে ‘বিউটি উইথ ব্রেইন’ অভিধাটা খুব শস্তা হয়ে গেছে, তবু এটা সত্যি যে, সত্যিকার বিউটি উইথ ব্রেইনরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থার স্বাভাবিক ফসল নন। পুরুষতন্ত্র সুন্দরী নারী চায়। মেধাবী নারী চায় না। একটা কথা তিক্ত হলেও সত্য যে, নারীর মেধা সমাজের চোখে তার কমনীয়তা যতোটা বাড়ায়, মানুষ হিসেবে তার মূল্য বোধ হয় আজও ততোটা বাড়ায় না।

সুন্দর হওয়াটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু সৌন্দর্যের যে মানদণ্ড সমাজের সর্বস্তরের নারীর মধ্যে প্রতি মুহূর্তে এক চোরা হীনম্মন্যতা উৎপাদন করে চলেছে, সেই মানদণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। কারণ সৌন্দর্যের ব্যাপারে নারীর এই হীনম্মন্যতা যতোদিন থাকবে, ততোদিন সে পুরুষতন্ত্রের কথায়ই উঠবে ও বসবে। অবস্থাটা এতোই খারাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, নারী এখন তার এই হীনম্মন্যতাকে কোনো দোষ মনে করে না বরং একেই স্বাভাবিক মনে করে। গায়ের রং কালো, এমন মেয়েরাও কেউ তাদেরকে কালো বললে আহত হয়, কারণ তারা নিজেরাও আসলে ফর্সা হতে পারাকেই জীবনের অন্যতম সার্থকতা মনে করে। এই মেয়েদেরকে কেউ (কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছাড়া) কালো বললেও তারা তাকে ‘জাজমেন্টাল’ আখ্যা দেয়। এমনকি বডি শেইমিং পর্যন্তও চলে যায় ব্যাপারটা। একই কথা প্রযোজ্য বয়োঃবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও। বয়স বাড়ারই জিনিস। কোনো নারী যদি তার বয়োঃবৃদ্ধি নিয়ে মানসিক চাপে থাকেন, তো তার নিজের মানসিক সুখই নষ্ট হবে সবার আগে। উচ্চবিত্ত নারীরা হয়তো প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে বয়স ঢেকে রাখতে পারবেন, মধ্যবিত্ত নারীরা হয়তো তাদের সীমিত সামর্থ্যে ভর করে বিভিন্ন রকম সাজসজ্জা দিয়ে তাদের সৌন্দর্য ও যৌবনকে আরো একটু প্রলম্বিত এবং বার্ধক্যকে কিঞ্চিৎ বিলম্বিত করতে পারবেন। কিন্তু শেষ রক্ষা কারোরই হবে না। আমরা সবাই জীবনের নিয়মেই এক সময় বুড়ো হয়ে যাই। মজার বিষয় হচ্ছে, বার্ধক্যে পৌঁছালে নারী তার জীবনের অনেক বাধ্যবাধকতা থেকেই মুক্তি পেয়ে যায় (সিমোঁ দ্য বেভোয়াঁ যেমন লিখেছেন, বৃদ্ধা নারী আসলে প্রায় অ-লৈঙ্গিক এক মানুষ)। কিন্তু এই মুক্তি তার তেমন কোনো কাজে আসে না। সুতরাং নারীকে তার জীবনের শুরুতেই স্বাধীনতার কথা ভাবতে হবে এবং জীবনের শারীরিক সত্যগুলোকে নারীকে মেনে নিতে শিখতে হবে। পুরুষতন্ত্র নারীকে তার শরীরের সঙ্গেই অনবরত মিথ্যা বলে যেতে শিখিয়েছে। কিন্তু নারী যদি মুক্তি চায়, তো তাকে সত্য বলতে ও সত্য মেনে নিতে শিখতে হবে। এবং সেটাই হবে পুরুষতন্ত্রের শোষণের বিরুদ্ধে নারীর এক বড়ো প্রতিবাদ। একুশ শতকের পৃথিবীতে অবশ্য শুধু নারী নয়, পুরুষও কমবেশি সৌন্দর্য-ভিত্তিক শোষণের শিকার। মুক্তবাজার ও সোশ্যাল মিডিয়ার দৌরাত্ম্যের এই যুগে পুরুষ-নারী উভয়েই তাদের শরীর নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগছে, সবাই চাইছে পছন্দের তারকাদের মতো সুন্দর ও সেক্সি হতে। সুন্দর হতেই হবে—এই বাধ্যবাধকতা থেকে পুরুষ-নারী উভয়কেই বাঁচানো জরুরী হয়ে পড়েছে। কিন্তু তার জন্য সবার আগে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত হতে হবে, সমাজের চোখে অসুন্দর হওয়ার ঝুঁকি নিতে হবে মুক্তিকামী নারী-পুরুষকে। নারীর ক্ষেত্রে বিষয়টা আরো বেশি জরুরী। কারণ সারা দুনিয়ায় এখনো অধিকাংশ নারীর জীবন আয়না, স্বামী ও সন্তানের সেবা করেই কেটে যাচ্ছে। নারী যদি নিজে থেকে অবজেক্টিভ বিউটির ছাঁচে ধরা দেয়, আদর্শ সুন্দরী নারী হতে গিয়ে নারী যদি তার জীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিকের কথা ভাবতে ভুলে যায়, তাহলে কোনো দেশে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যতো কিছুই করা হোক না কেনো, শেষ পর্যন্ত নারী তার আকাঙ্খিত স্বাধীনতা লাভ করতে পারবে না। সুসান সোনট্যাগ বলেছিলেন, নারীর জন্য সৌন্দর্য হলো, দাসত্বের রঙ্গমঞ্চ। এই রঙ্গমঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে, অর্থাৎ পুরুষতন্ত্রের সঙ্গে চলমান মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে জয়লাভ করতে না পারলে, নারীকে তার দাসত্ব নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

তথ্যসূত্র:

Sonntag, S. (2023) On Women, Hamish Hamilton

Wolf, N. (1990) The Beauty Myth: How Images of Beauty Are Used Against Women, Chatto & Windus

আজাদ, হুমায়ুন (অনু) (২০১২) দ্বিতীয় লিঙ্গ: সিমোন দ্য বোভোয়ার, আগামী প্রকাশনী

 

 

 

 

 

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাম্প্রতিকা