মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৫, ২০২৫
Homeনারীবাদবিয়ে হলে কি জীবন শেষ

বিয়ে হলে কি জীবন শেষ

দুঃখজনক হলেও সত্য এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে এখনও অনেক “শিক্ষিত” মানুষের মন মানসিকতা এমন যে বিয়ে মানেই মেয়েদের জীবন শেষ! অর্থাৎ তাদের জীবনের সবকিছুই সীমাবদ্ধ থাকবে শুধু সংসার, সন্তান, স্বামী আর শ্বশুরবাড়ি কেন্দ্রিক হয়ে। যেন এই পৃথিবীতে তাদের আর কোন স্বপ্ন, কোন আকাঙ্ক্ষা, কোন লক্ষ্য থাকার অধিকার তারা হারিয়ে ফেলে!

গ্রামাঞ্চলে এই ধারণা প্রচলিত ছিল বহু কাল আগে থেকেই। তাই সেখানে কিছুটা হলেও আমরা এর সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বুঝতে পারি। কিন্তু যখন দেখি আধুনিক শহরে বসবাসকারী, উচ্চশিক্ষিত সহপাঠী, সহকর্মী বা পরিচিত মানুষরাও এখনও সেই একই পুরনো চিন্তাভাবনায় আটকে আছেন তখন সত্যিই কিছুটা হতাশ লাগে। বিয়ের পর কোন মেয়ে যদি নিজের মতো করে চলতে চায়, নিজের ক্যারিয়ারে মনোযোগ দিতে চায়, নিজের পরিচয় ধরে রাখতে চায় তখন সমাজের অনেকেই তাকায় বাঁকা দৃষ্টিতে। তারা ভাবে, “এই মেয়ে নিশ্চয়ই স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির কাছে ভালো না, তাই এত স্বাধীন!”
“স্বামী উপার্জন করে, তাহলে তো মেয়ের উপার্জনের প্রয়োজনই নেই!”
“দুদিন পর বাচ্চা হবে, এত পড়াশোনা করে কী হবে?”

এমন প্রশ্ন আজও সমাজের অনেক কোণায় প্রতিদিন ভেসে বেড়ায়। কিন্তু কেউ কি বোঝে যে নারীর নিজের উপার্জন, নিজের অবস্থান, নিজের আত্মসম্মান-এগুলো তার সবচেয়ে বড় শক্তি? সময় সবসময় একরকম থাকে না। বিপদ-আপদ, দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, যেকোন কিছুই হঠাৎ করে জীবনে আসতে পারে। যদি কখনও স্বামী কর্মক্ষমতা হারায় তখন সংসার সামলানোর সক্ষমতা একজন নারীর থাকা অপরিহার্য। আর তাছাড়া মেয়েরও তো নিজের মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব আছে, যেটা সমাজ খুব সহজে ভুলে যায়। একজন উচ্চশিক্ষিত নারী শুধু ক্যারিয়ারে নয়, একজন সচেতন মা হিসেবেও সমাজের জন্য আশীর্বাদ। ভালো শিক্ষা, ভালো চিন্তা, আর নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি তার সন্তানকে সঠিকভাবে মানুষ করতে পারেন। আজকাল যত কিশোর অপরাধ, নৈতিক অবক্ষয় দেখি এর পেছনে “ব্যাড প্যারেন্টিং” এর ভূমিকাই আমার সবচেয়ে বেশী মনে হয়। একজন সচেতন, আত্মনির্ভরশীল মা অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারে তার পরিবারের মধ্যে। অবশ্য এখন সময় বদলাচ্ছে। অনেক শ্বশুরবাড়ি এখন সচেতন হয়েছে। তারা চায় তাদের ছেলের বউ শুধু গৃহবধূ না থেকে নিজের পরিচয় গড়ুক, স্বাবলম্বী হোক, সমাজে কিছু অবদান রাখুক। অনেক সাপোর্টিভ স্বামী আছেন যারা স্ত্রীর স্বপ্ন, পড়াশোনা, ক্যারিয়ার সবকিছুকে সমান গুরুত্ব দেন। তবে দুঃখজনকভাবে এই পুরুষদেরও তুচ্ছ করা হয়, হেয় করা হয়! সমাজ বলে—
“বউয়ের কথায় চলে, স্ত্রীভক্ত নাকি!”

কিন্তু সত্যিকারের পুরুষ তো সেই, যে নিজের সঙ্গিনীর স্বপ্নকে সাপোর্ট দেয়, পাশে থাকে, একসাথে এগোয়।
বিয়ের পরও যখন কোন নারী নিজের ক্যারিয়ারে মন দেয়, তখন তাকে শুনতে হয়–
“তোমার তো বিয়ে হয়ে গেছে, স্বামী আছে, চাকরি করে কি হবে?”
“তোমাকে এত সাপোর্ট দেয়? বাহ দারুণ তো!”

এই “বাহ দারুণ তো”
কথাটার মধ্যে লুকিয়ে থাকে তাচ্ছিল্য, উপহাস- প্রশংসা নয়। তবে পুরনো এই মানসিকতা এবার বদলানোটা মনে হয় বেশী জরুরি হয়ে পড়ছে। আজকাল কর্মজীবি নারীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় যে বিশ্রীভাবে বুলি করা হচ্ছে তা দেখে এটা স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে।
বিয়ে মানে কোন মেয়ের স্বপ্নের ইতি নয়, বরং নতুন শুরু। আজকাল অনেক নারী আছেন যারা সংসার, স্বামী, সন্তান সব সামলে নিজের জায়গা তৈরি করছেন।
তারা প্রমাণ করছেন সংসার করা আর ক্যারিয়ার গড়া দুটোই একসাথে সম্ভব, যদি মন আর মানসিকতা ঠিক থাকে। তাই সমাজের সেই মানুষগুলোকে একটা কথাই বলবো-যাদের বিবাহিত সফল নারী দেখে জ্বলে,
যারা ভাবেন মেয়ের সাফল্য মানেই তার অহংকার
তারা একবার নিজের জীবনের দিকে তাকান।
অন্যেকে ছোট করে আপনারা বড় হতে পারবেন না।
অন্যের সাফল্য সহ্য না হবার মানে হলো নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করা।

তাই আপারা, ভাইয়েরা—
ওয়ার্কিং, ক্যারিয়ার ফোকাসড নারীদের সাফল্য দেখে জেলাস না হয়ে, বরং অনুপ্রাণিত হোন।
তাদের দেখে শিখুন, কীভাবে দায়িত্ব, ভালোবাসা আর স্বপ্ন তিনটাকেই সুন্দরভাবে ব্যালেন্স করা যায়। আর নিজের কাজ করুন, নিজেকে কীভাবে বেটার মানুষ হিসেবে গড়া যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করুন।

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাম্প্রতিকা