সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই জীবিকার তাগিদে আর ভাগ্যোন্নয়নের আশায়, মানুষ কাজের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় আঠারো কোটি। এই বিপুল বিস্তৃত জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে যেভাবে বিনির্মাণ করা দরকার ছিল, দরকার ছিল রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর উপযোগী করে গড়ে তুলে শিল্পের বৈপ্লবিক বিকাশ ঘটানো, সেটা ৫৩ বছর বয়সের প্রৌঢ় দেশটি আজও করে উঠতে পারেনি। ফলে বেকারত্ব আর দারিদ্র্য আজও আমাদের অনেক নাগরিকের জীবনের নিত্যসঙ্গী। প্রতিবছর প্রায় ২০ লক্ষ লোক শ্রম-বাজারে প্রবেশ করছে। এর প্রায় অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে গমন করে থাকেন। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। বর্তমানে বিশ্বের ১৭৩ টি দেশে প্রায় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছে। প্রবাসী কর্মীদের প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণাললের দায়িত্বশীল আচরণ নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। নানান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রবাসী কর্মীদের সার্বিক সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রনালয়।
২০২০ সালে নাহার বেগম (৩৬) ৫০ হাজার টাকা খরচ করে গৃহকর্মীর ভিসায় সৌদি আরব গমন করেন। বিদেশ যাওয়ার পর থেকেই নিয়োগকর্তা তাকে ঠিকমত বেতন দিতো না। বাড়িতে ১৫ জন সদস্যের জন্য রান্নাবান্না, ঘরদোর পরিষ্কার করা, কাপড় ধোয়াসহ সব কাজই নাহার বেগমকে করতে হতো। প্রতিদিন তিনি প্রায় ১৮ ঘন্টা কাজ করতেন। তাকে ঠিকমত খাবারও দেওয়া হতো না। এছাড়া তাকে শারীরিক ও মানাসক নির্যাতন করা হতো। এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবার থেকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে নাহার বেগমকে দেশে ফেরত নিয়ে আসা হয়।
একরাশ স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিলেও নাহার বেগমের মতোই অনেককে শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হয়। কেউ আসেন প্রতারিত হয়ে, কেউ আসেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে, আবার কেউ বা আসেন লাশ হয়ে। দিশেহারা হয়ে প্রবাস ফেরত কর্মীরা সহায়তার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরাঘুরি করে অনেক সময় নষ্ট করে থাকেন। বেশিরভাগ সময় সঠিক তথ্য না জানার কারনে তারা সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সেবা ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হোন।এই ধরনের ক্ষতিগ্রস্থ অভিবাসীদের জন্য রয়েছে ক্ষতিপূরন আদায়সহ বিভিন্ন রকমের সরকারি সেবা ও সুযোগ-সুবিধা।
সঠিক নিয়ম মেনে বিদেশে গেলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে প্রবাসীরা যেসব সেবা ও সুযোগ সুবিধা লাভের অধিকারী হোন,,,
§ জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিসের মাধ্যমে সব ধরনের তথ্য সহায়তা এবং ভিসা যাচাই করার সুবিধা। (ফ্রি ভিসা বলে কোন ভিসা নাই, ফ্রি ভিসায় যাওয়ার মানে নিশ্চিত প্রতারিত হওয়া)
§ প্রবাসী কর্মীরা বিদেশে চাকুরিজনিত কোন সমস্যায় পড়লে অর্থাৎ চুক্তি অনুযায়ী কাজ ও বেতন পাওয়া না গেলে কিংবা প্রতারিত হয়ে দেশে ফেরত এলে বিএমইটি (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরো) অভিযোগ সেলে আবেদনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান।
§ প্রবাসী কর্মীদের দেশে পড়ুয়া সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান এবং তাদের প্রতিবন্ধী সন্তানদের জন্য ভাতা প্রদান।
§ প্রবাসী কর্মীরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে দেশে ফেরত আসার ৬ মাসের মধ্যে আবেদন করলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
§ বিদেশে অবস্থানরত কোন অভিবাসী কর্মী মারা গেলে মৃতদেহ দেশে ফেরত আনা এবং মৃতদেহ দাফন কাফনের জন্য পরিবার প্রতি ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেয়া হয়।
§ বিদেশগামী কর্মী ও প্রত্যাগত অভিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়।
§ এছাড়া প্রবাসী কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ৬ মাসের মধ্যে ফেরত আসলে তাদের জন্য রয়েছে ৫০ হাজার টাকার বীমা সুবিধা।
১৬১৩৫’ টোল ফ্রি নম্বর দিয়ে ‘প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার’ এর মাধ্যমে তথ্য সহায়তা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধি সম্পর্কে অনেক শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিকই অবগত নন। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশে খুব কম পরিবারই খুঁজে পাওয়া যাবে, যে পরিবারে কোন প্রবাসী কর্মী নেই। এই ব্যর্থতা রাষ্ট্রের। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া ব্যবহার করে খুব সহজেই জনগণকে এ সম্পর্কে সচেতন করা সম্ভব, যদি আন্তরিকভাবে রাষ্ট্র তা চায়।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে নেয়া।