বছর তিনেকেরও আগে নরসিংদীতে ‘নারী অঙ্গন’ এর যাত্রা শুরুর দিক থেকেই আমরা শ্রমজীবী নারী , গৃহিণী, স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নারী শিক্ষার্থীদের পাশে বিভিন্নভাবে থাকার চেষ্টা করে এসেছি এবং করছি। সেই লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন সময় গৃহিণী, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদের নিয়ে আলাদাভাবে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক পর্যায় থেকে বসেছি। “নরসিংদী জেলা নারী উদ্যোক্তাদের মেলা” নামে একটা প্লাটফর্ম আছে নরসিংদীতে। তারা যখন একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে স্বল্প পরিসরে প্রতি সপ্তাহে মেলার আয়োজন করতো, মেলার সংগঠকদের মধ্যে একজন আমাদের ছাত্রী ছিল, আমি যার পন্যের নিয়মিত কাস্টমার ছিলাম, সেই ছাত্রীকে বারবার পরামর্শ ও তাগিদ দিয়েছি, মেলাটা পৌর পার্কে নিয়ে এসে বড় পরিসরে করার জন্য। মেলা পৌর পার্কে নিয়ে আসার পর কিছু দিনের মধ্যেই তারা নরসিংদীতে একটা সাড়া ফেলে দেন। এই মেলাকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর শত শত নারী, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। নারীদের নিয়ে কাজ করায়, এই ব্যাপারটা আমাদের জন্য ছিল একটা সুখকর খবর।
আমরা নারী উদ্যোক্তাদের এই প্লাটফর্মের পাশে সব সময় থাকলেও তারা শুরু থেকেই আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে এসেছেন। এমনকি নারীদের বিভিন্ন স্বার্থ নিয়ে লেখা কিংবা আমাদের কোন অনুষ্ঠান আয়োজনের খবর তাদের ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার দিলে সাধারণত এপ্রোভ দিতেন না। নারীদের পক্ষে আমাদের এক্টিভিজমকে তারা ধর্মবিরোধী নাস্তিকদের কাজ বলে প্রচারণা করে এসেছেন এতোদিন। এছাড়া তারা শুরু থেকেই ক্ষমতা ও ক্ষমতাবানদের পা চেটে এসেছেন, যা ‘নারী অঙ্গন’ এর দৃষ্টি কখনোই এড়ায়নি। এরপরও ব্যক্তিগত জায়গা থেকে এবং সাংগঠনিক জায়গা থেকে আমরা সব সময় তাদের পাশে থেকেছি এবং এখনো আছি।
কয়েক দিন ধরে স্বার্থগত দ্বন্দ্বের কারণে ( যদিও দ্বন্দ্বটা শুরু থেকেই ছিল) উদ্যোক্তাদের একটা অংশ এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করা কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে পৌর পার্কের সাপ্তাহিক পণ্য প্রদর্শনী হাটটি বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা ‘নারী অঙ্গন’ এর পক্ষ থেকে বরাবরের মতো এবারও নারী উদ্যোক্তাদের পাশে আছি এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, তারা আমাদের বিরুদ্ধে থাকলেও যেকোন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে আছি আমরা। মোটকথা, নারীদের কিছুমাত্র এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে যারাই মাঠে আছেন, সকল মতভিন্নতা সত্ত্বেও ‘নারী অঙ্গন’ তাদের পাশে আছে এবং থাকবে।
আর বিরোধী পক্ষকে বলতে চাই, মেলার সংগঠকদের সমস্যা থাকলে সমালোচনা করুন, সমস্যাগুলো নিয়ে আলাপ করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করুন। কিন্তু পৌর পার্কে নারী উদ্যোক্তাদের মেলা কিছুতেই বন্ধ করা যাবে না। স্থানীয় প্রশাসনকে বলবো, সরকারের পলিসি যেখানে চাকরির চেয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে নাগরিকদের গড়ে তোলার দিকে, সেখানে এতোগুলো সম্ভাবনাময় নারী উদ্যোক্তার বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার পথকে রুখে দিবেন না, মেলাটি বন্ধ করে দিয়ে। বরং বিবাদমান পক্ষের সাথে বসে দ্বন্দ্ব মীমাংসা করে রাত দশটা পর্যন্ত তারা যেন নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে মেলার কার্যক্রম চালাতে পারেন সেই ব্যবস্থা করুন।
যদি সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের না করে মেলা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে ‘নারী অঙ্গন’ নারীদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতাকে রুখে দেওয়ার জন্য করা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান জারি রাখতে বদ্ধ পরিকর।