শুক্রবার, জুলাই ২৬, ২০২৪
Homeনারীবাদনারীবাদী রবীন্দ্রনাথ এবং একশো বছর পরের মৃণাল-হৈমন্তীরা

নারীবাদী রবীন্দ্রনাথ এবং একশো বছর পরের মৃণাল-হৈমন্তীরা

বাংলা ১৩২১ সনের জ্যৈষ্ঠ ও শ্রাবণ মাসে অর্থাৎ দুই মাসের ব্যবধানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অসাধারণ দুটি ছোটগল্প লেখেন। এর কিছুদিন আগেই (২৫শে বৈশাখ) তাঁর বয়স ৫৩ পূর্ণ হয়েছে। গল্প দুটি দুজন নারীর গল্প। তাদের জীবনের দুঃখ-কষ্ট, শৃঙ্খল-বন্ধন, অসহায়ত্ব ও অপ্রাপ্তির কাহিনী। নারীর জীবনের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে তিনি এর আগেও লিখেছেন। কিন্তু তাঁর পরিণত বয়সে লেখা এ দুটি রচনা একটু ভিন্ন প্রকৃতির। এ গল্প দুটি শুধু ভুক্তভোগী নারীদের দুরবস্থাকে তুলে ধরেছে, তা-ই নয়, বিশ্লেষণী দৃষ্টিতে তুলে এনেছে সেই সব অসঙ্গতিকে, যেগুলো তাদের এই দুরবস্থার জন্য দায়ী। নারীর জীবনের দুঃখ-কষ্ট, নিপীড়ন, বঞ্চনা, শৃঙ্খল-বন্ধন, অসহায়ত্ব ও অপ্রাপ্তির প্রতি কিছুটা সচেতনতা কিংবা ভুক্তভোগী নারীদের প্রতি সমবেদনা অনুভব করা নারীবাদ নয়। যেসব সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অসঙ্গতির কারণে নারীর জীবনের এসব দুরবস্থার উৎপত্তি হয়েছে এবং জীবনের সকল গ্রন্থিতে তা জড়িয়ে গেছে, তাকে যুক্তিসম্মতভাবে বুঝতে শেখা এবং এসব অসঙ্গতি দূর করার প্রচেষ্টাই নারীবাদের মূল প্রবণতা। পরিণত বয়সে নারীর জীবন ও সমাজ বাস্তবতা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মধ্যে এ ধরনের সচেতনতা ও ভাবনা বিকশিত হয়েছে। যদিও সে সময় নারীবাদ শব্দটিও প্রচলিত হয়নি। একশো বছর আগে লেখা এই গল্প দুটির মধ্য দিয়েই আমরা এদেশে নারীবাদী ভাবনার একজন অগ্রণী মানুষের পরিচয় পাই। তাঁর গল্পে চিত্রিত একশো বছর আগের নারীদের জীবনের আলোকে আমরা দেখে নিতে পারি, কতটা পরিবর্তন ঘটেছে এক শতাব্দী পরে জন্ম নেয়া নারীদের জীবনে।

রবীন্দ্রনাথের ‘হৈমন্তী’ ও ‘স্ত্রীর পত্র’ দুটি গল্পই উত্তম পুরুষে বর্ণিত হয়েছে। কাহিনী বর্ণনায় ঘটনাগুলোর নির্মমতা ফুটিয়ে তুলতে যে আবেগ থাকতে হবে, ভুক্তভোগীর মধ্যেই তা থাকে। কিন্তু বুদ্ধি দিয়ে ঘটনাগুলোকে বিশ্লেষণ করতে গেলে এই আবেগ থেকে একটু দূরেই থাকা দরকার। চরম আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা ঘটনাগুলো থেকে কিছুটা দূরে না থাকলে এই আবেগ কাটানো সহজ নয়। শুধু তা-ই নয়, বিশ্লেষণের জন্য মানুষটির বুদ্ধিমান হওয়ারও প্রয়োজন আছে। দুটি গল্পেই ঘটনার বর্ণনাকারী ঘটনাগুলোর ভুক্তভোগী হলেও চরম আঘাতটি তার উপর পড়েনি এবং ঘটনাগুলো তখন (সময়ের দিক থেকে) তাদের থেকে একটু দূরে। এক্ষেত্রে লেখকের বেছে নেওয়া দুটি চরিত্রই বুদ্ধিদীপ্ত ও সাধারণের চেয়ে অগ্রসর চিন্তার। দুটি গল্পেই পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে নারীর চরম অমানবিক অবস্থানের করুণ কাহিনী রয়েছে। তবে ব্যতিক্রমী চরিত্রের বর্ণনাকারীকে দিয়ে লেখক শুধু কাহিনীর বর্ণনাই নয়, ঘটনার পেছনে থাকা পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ও সমাজের অমানবিকতা ও অসঙ্গতির বিশ্লেষণও করেছেন।


একশো বছর আগে যখন পুরুষের জন্য বিয়ে করা ছিল ‘বাঘের নরমাংসের স্বাদ’ পাওয়ার সঙ্গে তুল্য, সে সময় কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলেন হৈমন্তী গল্পে ঘটনার বর্ণনাকারী অপুর মতো ‘নবীন ছাত্ররা’, এ কথা গল্পের শুরুতেই আমরা জানতে পারি। হৈমন্তীর সঙ্গে তার বিয়ের করুণ ঘটনার ভুক্তভোগী হিসেবে তার মধ্যে ‘বেদনার কাল মেঘ’ জমে উঠলেও সেই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে ‘বৈশাখ সন্ধ্যার ঝড়ো বৃষ্টির মতো’ আবেগপূর্ণ বর্ণনায় তাকে নিঃশেষ করতে পারেনি। কারণ ততদিনে তার ভিতরকার ‘শ্মশানচারী সন্ন্যাসীটা আপনাকে আপনি পরিহাস করিতে বসিয়াছে’ এবং তার আবেগের ‘অশ্রু শুকাইয়া গেছে’। অপুর মধ্যকার আবেগশূন্য ও আত্ম-সমালোচনাকারী এই ‘সন্ন্যাসী’কে দিয়েই হৈমন্তী গল্পে রবীন্দ্রনাথ পিতৃতন্ত্রের কঠোর অনুশাসনে বাঁধা সমাজ-বাস্তবতার ব্যবচ্ছেদ করেছেন।

এই সন্ন্যাসী মনের কাঠগড়ায় প্রধান আসামী পিতৃতান্ত্রিক বিয়ের প্রথা, যা পিতৃতন্ত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। সে সময়ে নর-নারীর অন্তরের মিলন বা ভালোবাসা ঘটানো পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে বিয়ের উদ্দেশ্য ছিল না। পুরুষের জন্য যৌ*ন*স*ঙ্গী জোগাড় করা, পরিবারের জন্য উত্তরাধিকারী পাওয়া এবং অন্যান্য বৈষয়িক অর্জনের লক্ষ্যেই বিয়ে হত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাত্রের পরিবারের বৈষয়িক লাভ-লোকসানের বিচারেই নির্বাচিত হত পাত্রী। ‘পণের টাকার আপেক্ষিক গুরুত্ব’ বেশি হলে পাত্রপক্ষ পাত্রীর অন্যান্য যোগ্যতার ক্ষেত্রে ছাড় দিতে রাজি হতেন, যেমনটা হৈমন্তীর ক্ষেত্রে ঘটেছিল। তবে এসব সিদ্ধান্তের কোন পর্যায়েই পাত্রী তো দূরের কথা, অপুর মতো এফএ পাশ করে বৃত্তি পাওয়া পাত্রের মতও ‘যাচাই করা অনাবশ্যক ছিল’। পরিবারে পরিবারে সংঘটিত এসব বিয়েতে নর-নারীর আত্মিক মিলন ঘটত না। অপু লক্ষ্য করেছে, এই অমানবিক প্রথার মধ্যে ‘মন্ত্র পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্ত্রীটিকে একেবারে এক গ্রাসে গলাধঃকরণ’ করা হত। ফলে ‘অধিকাংশ লোকে স্ত্রীকে বিবাহমাত্র করে, পায় না এবং জানেও না যে পায় নাই; তাহাদের স্ত্রীর কাছেও আমৃত্যু এ খবর ধরা পড়ে না’। নর-নারীর প্রেম ও আত্মিক মিলনে যে মধুর স্বর্গীয় সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, এই অমানবিক বিবাহপ্রথার করণে অধিকাংশ নর-নারীই সেই মাধুর্য থেকে বঞ্চিত হত। অপু ব্যতিক্রম বলেই সেই অমৃত কিছুটা অস্বাদন করতে পেরেছিল এবং বুঝেছিল এটিই তার জীবনের পরম ‘সম্পদ’। পেয়েছিল বলেই সে জানে, অন্যরা তা পায় না এবং জানেও না এর সন্ধান। অল্প সংখ্যক যারা এই অমৃতের সন্ধান পেত, তারাও পিতৃতন্ত্রের নির্মম আঘাত থেকে সেই সুখকে বাঁচাতে পারত না, অপুও পারেনি।

পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের অনুশাসন এতটাই কঠোর ছিল যে, এর মধ্যে বেড়ে ওঠা পুরুষের মধ্যেও পিতার অবাধ্য হবার মত মনের জোর গড়ে উঠতো না। স্ত্রীকে ভালোবাসলেও পরিবারের কর্তার মতামত অগ্রাহ্য করে বা পারিবারিক প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে স্ত্রীর পক্ষ নেয়া বা তার জন্য কিছু করা সে সময়ে দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিল। অপু এমন চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু যা সে শেষ পর্যন্ত পেরেছিল, তা একদিক থেকে অসাধারণ। পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে বিবাহিত নারী কতটা হারায়, কতটা বঞ্চিত হয়, অপু তা নারীর অবস্থান থেকে অনুভব করতে পেরেছিল। অথচ পুরুষশাসিত সমাজে বেড়ে ওঠা পুরুষেরা এমনকি নারীরাও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা এতটাই আচ্ছন্ন থাকে যে, নারীর অবস্থান থেকে তাদের বঞ্চনা ও অপ্রাপ্তিকে বুঝতে পারে না। বিবাহিত জীবন হৈমন্তীকে কতটা রিক্ত করেছে, তা বোঝাতে গিয়ে অপু লিখছে, “আমাকে তো কিছুই ছাড়িতে হয় নাই। না আত্মীয়, না অভ্যাস… হৈম যে সমস্ত ফেলিয়া আমার কাছে আসিয়াছে। …এই গিরিনন্দিনী সতেরো-বৎসর-কাল কত বড়ো একটা মুক্তির মধ্যে মানুষ হইয়াছে… তাহা হইতে হৈম যে কিরূপ নিরতিশয় ও নিষ্ঠুর-রূপে বিচ্ছিন্ন হইয়াছে এতদিন তাহা আমি সম্পূর্ণ অনুভব করিতে পারি নাই…।”

অপুর মতো স্ত্রীকে ভালোবাসা এবং এর মধ্য দিয়ে প্রচলিত বিশ্বাসের বাইরে গিয়ে তার বঞ্চনা ও অপ্রাপ্তিকে বুঝতে পারা, তার প্রতি সহমর্মী হওয়া, এগুলো ঐ সময়ে বিরল ঘটনা ছিল। এদিক থেকে ব্যতিক্রমী হলেও আজন্ম পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের অনুশাসনে বেড়ে ওঠা অপু পরিবারের অনুশাসনকে অগ্রাহ্য করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তবে সেই অক্ষমতা যে তার মানবিক সীমাবদ্ধতা, তা সে স্পষ্টভাবেই বুঝেছিল এবং তা স্বীকার করতেও তার মনে কোন দ্বিধা ছিল না। তার নির্লিপ্ত ‘সন্ন্যাসী’ মন সেই সীমাবদ্ধতার কথা লিখতে গিয়ে লিখেছে,  “তাহাকে আমি সব দিতে পারি কিন্তু মুক্তি দিতে পারি না— তাহা আমার নিজের মধ্যে কোথায়?” অপুর এই প্রশ্নের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ আমাদের দেখিয়ে দেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শৃঙ্খল থেকে নারীদের মতো পুরুষেরাও মুক্ত নয়। এ সমাজ লোকধর্মের নামে মানুষের অস্থিমজ্জার মধ্যে যা প্রবেশ করায়, তা যে যুগে যুগে মানবিকতাকে অপমান করেছে, সে কথা স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য তিনি অপুকে দিয়ে উচ্চারণ করান, “যদি লোকধর্মের কাছে সত্যধর্মকে না ঠেলিব, যদি ঘরের কাছে ঘরের মানুষকে বলি দিতে না পারিব, তবে আমার রক্তের মধ্যে বহুযুগের যে শিক্ষা তাহা কী করিতে আছে… যেদিন অযোধ্যার লোকেরা সী*তা*কে বি*স*র্জ*ন দিবার দাবী করিয়াছিল তাহার মধ্যে আমিও যে ছিলাম। আর সেই বিসর্জনের গৌরবের কথা যুগে যুগে যাহারা গান করিয়া আসিয়াছে আমিও যে তাহাদের মধ্যে একজন।” এই অনন্য ব্যাঙ্গোক্তির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ আবহমান কাল থেকে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক রীতি-নীতির নির্মম অমানবিকতাকে তুলে ধরার পাশাপাশি হয়তো আত্মসমালোচনাও করেছেন।


পুরুষতান্ত্রিক পরিবার ও সমাজের বাস্তবতায় নারীর জীবন কতটা মূল্যহীন, তুচ্ছ, বন্দী, নিরানন্দ একঘেয়ে ছকে বাঁধা এবং অর্থহীন, তা ঐ জীবনে নিমজ্জিত একজন চিন্তাশীল নারীর বিশ্লেষণে জীবনের পাতা থেকে জীবন্ত তুলে ধরার অনন্য নজির ‘স্ত্রীর পত্র’ গল্পটি। এই গল্পে পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে নারী-জীবনের যে বিশ্লেষণাত্মক চিত্র উঠেছে, তা শুধু বাংলা সাহিত্য না, বিশ্বসাহিত্যেও বিরল। একশো সাত বছর আগে যখন এ গল্পটি লেখা হয়েছে, তখন সারা বিশ্বেই নারীর জীবনকে এভাবে দেখার ও বিশ্লেষণ করার মতো মানুষ ছিল হাতে গোনা। গল্পটি একজনের পত্র বা চিঠি হলেও এটা নিছক কুশল ও সংবাদ আদান প্রদানের চিঠি নয়। এটিকে বরং বলা যায় মৃণাল নামক এক নারীর জীবনের বিশ্লেষণাত্মক রেট্রোস্পেক্টিভ, যা তার আত্মস্মৃতি ও আত্মবিশ্লেষণে বর্ণিত হয়েছে। এ চিঠি মৃণাল তখনই লিখতে পেরেছিল, যখন সে ঘর-সংসারের একঘেয়ে ছকে বাঁধা বন্দী জীবনের খোলস থেকে বেরিয়ে এক মুক্ত জীবনের প্রান্তরে আসতে পেরেছিল। শ্বশুর বাড়িতে তার সেই খোলসের নাম ছিল ‘মেজবৌ’। যখন চিঠিটা লিখছে, তখন সে এই খোলস থেকে বেরিয়ে এসেছে। তাই শুরুতেই লিখেছে ‘এ তোমাদের মেজবৌ এর চিঠি নয়’। এই খোলস থেকে মুক্ত হবার বীজ মৃণালের মধ্যে ছিল। সে বুদ্ধিমতী ছিল বলেই আর পাঁচটা মেয়ের মতো সব কিছুর সঙ্গে আপোস করা বা মানিয়ে নেবার মানসিকতা তার ছিল না। সংসারের শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তার মনন মরে যায়নি। সে চিন্তা করত, কবিতা লিখত। এই মুক্ত চিত্তেই সে তার ফেলে আসা গ্লানিময় বন্দী জীবনকে দেখেছে। দেখার দৃষ্টিটা বিশ্লেষণের, সমালোচনার, যা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর করুণ জীবন এবং তার ভিত্তিভূমিকে আমাদের সামনে তুলে ধরে।

সংসারে পুরুষমানুষ ‘দামী’ আর মেয়েমানুষ ‘সস্তা’, এ কথা মৃণাল ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছে। শিশুকালে সে আর তার ভাই একসঙ্গে সান্নিপাতিক জ্বরে আক্রান্ত হবার পর সে বেঁচে ওঠেছিল, ভাইটি মা**রা গিয়েছিল। সমাজে সবাই বলল, মেয়ে বলেই রক্ষা পেয়েছে। এ ঘটনায় সমাজের প্রতিক্রিয়াকে ব্যঙ্গ করে মৃণাল বলছে, “চুরিবিদ্যাতে যম পাকা, দামী জিনিসের ’পরেই তার লোভ।” মেয়ে মানুষের মূল্যহীনতা বোঝাতে গিয়ে মৃণালের অন্য একটি উক্তি ছিল, “পিলে যকৃৎ অম্লশূল আর ক’নের জন্য তো কাউকে খোঁজ করতে হয় না।” রূপ থাকলে হয়তো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর কিছুটা মূল্যায়ন হয়। তবে সে মূল্যও নির্ধারিত হয় বিয়ের বাজারে সে কতটা দাম পেল তার উপর। রূপসী মৃণাল তার নিজের জীবনে বুঝেছিল, “রূপের গুমর তো মেয়ের মধ্যে নেই, যে ব্যক্তি দেখতে এসেছে সে তাকে যে দাম দেবে সেই তার দাম। তাই তো হাজার রূপে গুণেও মেয়ে মানুষের সংকোচ কিছুতে ঘোচে না।” মৃণালের (পক্ষান্তরে রবীন্দ্রনাথের) এই বিশ্লেষণ যে অন্তর্দৃষ্টি আমাদের মধ্যে জাগিয়ে তোলে, তা হল পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর রূপ-গুণ ক্রীতদাসের রূপ-গুণের মতো। এর জন্য ক্রেতা বা দাস-মালিক তাকে যে অতিরিক্ত মূল্য দেয়, সেটুকুই তার উপযোগিতা। রূপ দিয়ে মৃণাল নিজেকে পিতৃতন্ত্রের খড়গ থেকে বাঁচাতে পারেনি। অন্য মেয়েরাও পারে না। মৃণাল যে অনন্য এক নারী, সেটা তার রূপের কারণে নয়, বুদ্ধির কারণে।

কিন্তু পুরুষতন্ত্র নারীর কাছ থেকে বুদ্ধি চায় না, চায় বাধ্যতা। বুদ্ধিমান মানুষ অর্থাৎ যার মধ্যে ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা বিচার করার ক্ষমতা আছে, তার কাছ থেকে নিরঙ্কুশ বাধ্যতা আদায় করা সহজ নয়। তাই মৃণালের মা তার মেয়ের বুদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। কারণ মৃণালের ভাষায়, “মেয়ে মানুষের পক্ষে এ (বুদ্ধি) এক বালাই। যাকে বাধা মেনে চলতে হবে, সে যদি বুদ্ধিকে মেনে চলতে চায় তবে ঠোকর খেয়ে খেয়ে তার কপাল ভাঙ্গবেই।” তবে বুদ্ধির কারণেই মৃণাল হারিয়ে যায়নি, তার শ্বশুর বাড়ির পিতৃতান্ত্রিক পরিবারও তার সঙ্গে পেরে ওঠেনি। ‘মেয়ে জ্যাঠা বলে দুবেলা…’ মৃণালকে গাল দিয়ে তারা তাদের সেই অক্ষমতার সান্ত্বনা পেয়েছে। বুদ্ধির কারণেই মৃণাল পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের জীবনের অনেক কঠিন ও নির্মম সত্যগুলোকে দেখতে এবং বুঝতে শিখেছিল। যা তার মাধ্যমে লেখক আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন।

সে সময়ে স্বচ্ছল পরিবারেও মেয়েদের জীবন যাপনের উপকরণগুলো ছিল দৈন্য, অবহেলা ও অস্বাস্থ্যের প্রতীক। সদরে আভিজাত্য থাকলেও মেয়েদের অন্দর মহলটা ছিল ‘পশমের কাজের উল্টো পিঠ… শ্রী নেই, সজ্জা নেই… আলো মিটমিট করে জ্বলে’। দাসী জীবনে নারীরা এসব মেনেই নিত, এটা নিয়ে তাদের বিশেষ কোন দুঃখ থাকত না। এর কারণ সম্পর্কে মৃণাল বলছে, “আত্মসম্মান যখন কমে যায় তখন অনাদরকে তো আর অন্যায্য বলে মনে হয় না। সেই জন্যে তার বেদনা নেই। তাই তো মেয়ে মানুষ দুঃখবোধ করতেই লজ্জা পায়।” যেমন করেই রাখা হোক ‘দুঃখ যে আছে একথা মনে করবার কথাও কোন দিন’ তাদের মনে আসে না। এই গল্পে বিন্দুর মতো রূপহীন, দরিদ্র ও আশ্রয়হীন মেয়ের অবস্থান তুচ্ছতা ও দাসত্বের একেবারে তলায়। পরিবারের লোকেরা যাকে বাড়ির ‘একটি কোণও ছেড়ে দিতে চায়নি যে কোণে একটি অনাবশ্যক জিনিস পড়ে থাকতে পারে’। বিন্দুর করুণ কাহিনী যে সত্যকে আমাদের সামনে মূর্ত করে তোলে, তা হল পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বিয়ের প্রথা নারী জীবনের অনিবার্য কারাগার বা শৃঙ্খল, যাকে এড়িয়ে যাওয়া নারীর জন্য অসম্ভব না হলেও দুঃসাধ্য। কৈশোরে উপনীত হলে এ সমাজে নারীর একমাত্র ‘উপযোগিতা’ বিবেচিত হয় বিবাহিত জীবনে। যে পরিবারে সে জন্মেছে, সেখানেও সে আর প্রয়োজনীয় নয়, বিয়ের জন্য সমাজের চাপের কারণে তার উপস্থিতি উপেক্ষাও করা যায় না। মৃণালের ভাষায়, “…অনাবশ্যক মেয়ে মানুষ যে একে অনাবশ্যক আবার তার উপরে তাকে ভোলাও শক্ত; সেইজন্য আঁস্তাকুড়েও তার স্থান নেই।” বিয়ের বাধ্যবাধকতার মধ্যে না পড়তে হলে হয়ত বিন্দুকে অকালে ম*র*তে হত না।

পুরুষতান্ত্রিক পরিবার ও সমাজ নারীর চিন্তাশীলতা এবং নিজস্বতাকে নিঃশেষ করে দেয়। এ সমাজে  বেড়ে ওঠা নারীরা প্রচলিত নারী-বিরোধী অমানবিক রীতি-নীতির দ্বারা এতটাই আচ্ছন্ন হয় যে, তারাও নির্মমভাবে নারীর উপর এগুলোর প্রয়োগ করে। তাদের কাছেও পুরুষের মূল্যই বেশি, সে যেমন পুরুষই হোক। আর মেয়েমানুষ নিতান্তই আগাছা। বিন্দুকে পাগল ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে তার শ্বশুর রাজি না থাকা সত্ত্বেও শাশুড়ি জেদ করে পাগল ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন। যে মেয়েটিকে বৌ করে আনা হচ্ছে, তার কী হবে, সে বিবেচনা তিনি করেননি। কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে “মেয়েমানুষ মেয়েমানুষকে দয়া করে না। বলে, ও তো মেয়েমানুষ বই তো নয়। ছেলে হোক না পাগল, সে তো পুরুষ বটে”। পাগল হলেও পুরুষের দাম নারীর চেয়ে বেশি, সেটা নারীর কাছেও। শুধু শাশুড়িই নয়, পাগল স্বামী সম্পর্কে বিন্দুর বড় বোন বলছে, “…পাগল হোক, ছাগল হোক, স্বামী তো বটে।” অর্থাৎ স্বামী যেমনই হোক, একজন স্বামী ছাড়া নারীর কোন গতি নেই। তার সেবায়, তার সুবিধায় জীবন উৎসর্গ করাই নারী জীবনের স্বার্থকতা। অতএব বিন্দুকে তার পাগল স্বামীর সেবায় ফিরে যেতে হবে, সেটাই মৃণালের শ্বশুর বাড়ির সবাই চাইছিল। তাদের মনে যে সতী-সাধ্বী স্ত্রীর যে প্রচলিত কাহিনী জেগে ওঠেছিল, তা হল ‘কুষ্ঠ রোগীকে কোলে করে স্ত্রী বেশ্যার বাড়ি পৌঁছে’ দেওয়ার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নৈতিক অন্তসারশূন‌্যতার চরম নিদর্শন এই গল্পটি মৃণালের ভাষায় ‘জগতের মধ্যে অধমতম কাপুরুষতার’ একটা গল্প।

পরিণত রবীন্দ্রনাথের অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে— নারীর জীবনের মূল ট্র‍্যাজেডি হল অনিবার্য নিয়তি হিসেবে জড়িয়ে থাকা পিতৃতান্ত্রিক বিয়ে এবং পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের পতি-কেন্দ্রিক জীবনে অবহেলা ও অবদমনের নিরানন্দ অভ্যাসের এক অন্ধকার চক্রে বাঁধা পড়া। এই আঁধার তার মূল্যহীন জীবনকে আরো জীর্ণ, আরো ক্লিষ্ট করে তোলে। দুর্বহ সে জীবন তাই মৃ**ত্যু**কে আলিঙ্গন করতে কোন দ্বিধা করে না। মৃণাল লিখেছে, “জীবন আমাদের কীইবা যে মরণকে ভয় করতে হবে? আদরে যত্নে যাদের প্রাণের বাঁধন শক্ত করেছে মরতে তাদেরই বাধে।” আসলে এই বন্দী নারী জীবনের অন্ধকার কতটা অন্ধকার ছিল, তা আমরা বুঝতে পারি, যখন সেই জীবনের খোলস থেকে বেরিয়ে এসে মৃণাল মুক্ত জীবনে দাঁড়ায়। যখন সে বুঝতে পারে, “…কত তুচ্ছ আমার এই প্রতিদিনের জীবনযাত্রা, কত তুচ্ছ এর সমস্ত বাঁধা নিয়ম, বাঁধা অভ্যাস, বাঁধা বুলি… আজ বাইরে এসে দেখি, আমার গৌরব রাখবার আর জায়গা নেই।”

একশো বছর আগে রবীন্দ্রনাথ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অবদমিত ও বঞ্চিত জীবন এবং এর কার্যকারণ সম্পর্কে যেভাবে ভেবেছেন এবং মৃণালের মাধ্যমে সেগুলোর সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন, তা আমাদের বিস্মিত করে। আজকের দিনেও তার সেসব চিন্তা আমাদেরকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এবং এর বাস্তবতাকে চিনতে শেখায়। মৃণালের মুক্তি এ যুগের পুরুষশাসিত সমাজ ও পরিবারের বন্দিনীদের দিশা ও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।


এই অসাধারণ গল্প দুটি যে সময়ের বাস্তবতা নিয়ে লেখা হয়েছিল, তার একশো বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কেমন আছে এ সময়ের হৈমন্তী ও মৃণালের মতো নারীরা? এ প্রশ্নের মধ্য দিয়ে সবাই হয়ত একই উত্তর চাইবে না এবং সবাই হয়ত বিষয়টিকে একভাবে দেখবেও না। মোটাদাগে বলা যায়, একশো বছরে নারীর জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, নারীরা এখন অনেক কিছুই করছে, যা সে সময়ের নারীরা কল্পনাও করতে পারত না। মেয়েদের একটি অংশ আগের চেয়ে শিক্ষার সুযোগ বেশি পাচ্ছে। তাদের একাংশ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছে। পঞ্চাশ বছর আগেও যে সব পেশায় শুধু পুরুষেরাই ছিল, অনেক নারী এখন সে সব পেশায়ও যুক্ত হয়েছে। এর ফলে নারীদের একাংশ এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ পরিবারের মূল উপার্জনকারীও। আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক নারী তাদের মনন ও চিন্তাশীলতাকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং সৃজননীল কাজে অংশ নিতে পারছে। একশো বছর আগের থেকে মেয়েদের বিয়ের বয়সও হয়তো কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু এখনো বেশিরভাগ নারীর জীবনে বিয়ের অনিবার্যতা এবং পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের অবহেলা ও অবদমনের নিরানন্দ অভ্যাসের চক্রে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যপারটা ব্যাপকভাবেই রয়ে গেছে। এখনো বেশিরভাগ মেয়ের অর্থনৈতিক জীবন বিয়ে-নির্ভর অর্থাৎ পুরুষ-নির্ভর।

নারীর অধিকার ও মানবিক মর্যাদা নিয়ে সর্বপ্রথম যারা যৌক্তিকভাবে সরব হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ইংরেজ লেখিকা মেরি ওলস্টোনক্রাফ্ট। আজ থেকে দুশো তিরিশ বছর আগে তিনি বলেছিলেন, আমি নারীদের পুরুষকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি অর্জন করতে বলছি না, তারা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি অর্জন করুক। তিনি বিশ্বাস করতেন, নারীর জীবনের অর্থনৈতিক ভিত্তি বিয়ে বা পুরুষ-নির্ভর না হলেই তার মুক্তির পথ সুগম হবে। এখনো বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রেই বিবাহিত জীবনে নারী-পুরুষের অসম একটি সম্পর্ক বজায় থাকে, যেখানে নারীর কাছ থেকে বাধ্যতা আশা করা হয়, বুদ্ধি নয়। এ যুগেও তাই মৃণালের মতো অনেক বুদ্ধিমতী ও স্বাধীনচেতা মেয়েদের ‘ঠোকর খেয়ে’ কপাল ভাঙে। পিতৃতান্ত্রিক পারিবারের কতৃত্ব-কাঠামোর ক্ষেত্রে একশো বছরে মৌলিক কোন পরিবর্তন হয়নি। একশো বছর পরে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে সামাজিক ও পারিবারিক আইনের ক্ষেত্রে। যদিও তার প্রয়োগ এখনো ব্যাপক নয়। নারীকে তার অধস্তন অবস্থান এবং অসম ক্ষমতা-সম্পর্কের মধ্যে রাখার ক্ষেত্রে এ যুগেও পুরুষতান্ত্রিক পরিবার এবং সমাজ স*হি*ং *স*তা ও নি*পী*ড়*নকে ব্যবহার করে। এখনো আমাদের সমাজে মোটের উপর প্রতি তিন জনে একজন নারী স*হিং*স*তা ও নি*পী*ড়*নে*র শিকার হন এবং তাদের অধিকাংশই এগুলোর ভীতি ও হুমকির মধ্যে থাকেন।

পিতৃতান্ত্রিক পারিবারের বিধি-নিষেধ অগ্রাহ্য করে নিজের ইচ্ছেমতো কিছু করতে গেলে, পুরুষ-সঙ্গীর ইচ্ছে-মাফিক কাজ করতে বা যৌ*ন*স*ঙ্গ দিতে অস্বীকার করলে কিংবা চাপিয়ে দেওয়া বিধি-নিষেধ এবং অন্যান্য পেরেশানির প্রতিবাদ করলে পুরুষতান্ত্রিক পরিবারের সদস্যদের স*হিং*স*তা ও নি*পী*ড়*নের শিকার হতে হয় তাদের। প্রতিটি সমাজের পরিসংখ্যানই বলে, এ যুগে নারীরা সবচেয়ে বেশি নি*পী*ড়*নের শিকার হন পরিবারের সদস্যদের দ্বারা। খু**ন হওয়া প্রতি পাঁচ জন নারীর চার জনই নিহত হন পুরুষ কর্তৃক। এদের (খু**ন হওয়া নারীদের) এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক পর্যন্ত খু*নি*র সঙ্গে বিবাহিত সম্পর্কে অবদ্ধ ছিল। প্রেমিক এবং প্রাক্তন স্বামীদের যোগ করলে এ সংখ্যা অনেক বাড়বে। নারীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে নাজুক, দুর্বল এবং গ্লানির জায়গা হচ্ছে তার যৌ*ন*তা এবং যৌ*ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। অতএব, নারীকে সবচেয়ে নির্মমভাবে আঘাত করার উপায় হচ্ছে যৌ*ন নি*পী*ড়*ন। এই নতুন শতাব্দীতেও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এতটাই রক্ষণশীল যে, নারীর উপর যৌ*ন-নি*পী*ড়*ন যার দ্বারাই সংঘটিত হোক, এর মুখ্য গ্লানি হচ্ছে আক্রান্ত নারীর এবং এই গ্লানি বা ‘কলঙ্ক’ এমন এক গ্লানি, যা কোন কিছু দ্বারাই মোচনীয় নয়।

এ যুগেও মননশীল নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে অনেক কম। বেশিরভাগ নারী হৈমন্তীর মতো সংস্কারমুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে না। ফলে এই ব্যাপক ও অধিকাংশ হৈমন্তী বা মৃণালের মতো মননশীল হয়ে উঠতে পারে না। যাদের মধ্যে মননশীলতা গড়ে ওঠে বা ওঠার সম্ভবনা থাকে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। গ্রামে ও দরিদ্র পরিবারে মেয়েদের বেশিরভাগেরই কৈশোরে বিয়ে হয়। অল্প বয়সে সন্তান ধারণ, ঘর-সংসার করতে গিয়ে জগৎ-সংসার সম্পর্কে আর জানা হয় না তাদের। নিজের কোন জগৎ গড়ে ওঠার সুযোগই থাকে না এসব মেয়েদের। এখনো এদেশে বেশিরভাগ বিয়ে দুই পরিবারের মধ্যেই হয়। যেখানে পাত্র-পাত্রীর মতামত নেওয়া হয় না। এবং বৈষয়িক লাভ-লোকসানের বাণিজ্যিক বিয়ের সংখ্যাও কম নয়। এখনো বেশিরভাগ বিয়েতেই নর-নারীর প্রেম ও আত্মিক মিলন ঘটে না। বাণিজ্যিক বিয়েতে লাভ লোকসান নিয়ে বিরোধ হলে তার মূল্য দিতে হয় বিবাহিত নারীকেই (শারীরিক ও মানসিক নি*র্যা*ত*নে*র শিকার হয়ে)। একশো বছর পরেও এসব ক্ষেত্রে পুরুষের অবস্থান থাকে পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের পক্ষেই।

ওলস্টোনক্রাফ্ট-এর দুশো বছর এবং রবীন্দ্রনাথের একশো বছর পরও বেশিরভাগ মেয়েদের অর্থনৈতিক জীবন পুরুষ এবং পিতৃতান্ত্রিক পরিবার-নির্ভর রয়ে গেছে। তবে এত কিছুর পরেও আশার কথা হল, সমাজ বদলাচ্ছে ধীরে ধীরে। একশো বছর কম সময় না। আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক নারী মৃণালের মতো পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের প্রতিদিনের তুচ্ছ জীবনযাত্রা, বাঁধা নিয়ম, বাঁধা অভ্যাস, বাঁধা বুলির শৃঙ্খল পেরিয়ে বেরিয়ে আসছে। এ যুগের অপুরা আরো আরো সাহসের সঙ্গে পরিবারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারছে। বিয়ের অনিবার্যতাকে অস্বীকার করার সুযোগ ও সাহস অনেক নারীকেই মুক্তির প্রান্তরে নিয়ে যাচ্ছে। শত বছর পরে রবীন্দ্রনাথের মতো কোন গল্পকার হয়তো লিখছেন তাদের সেই সব কাহিনী।

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাম্প্রতিকা