শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
Homeজীবিকার আলাপমা- মেয়ে, তেঁতুল চা এবং অতঃপর...

মা- মেয়ে, তেঁতুল চা এবং অতঃপর…

মেয়েটার মনটা খুব খারাপ ছিল গতকাল। সামনে ওর বার্ষিক পরীক্ষা। পঞ্চম শেণীতে পড়ে সে। গতকাল স্কুলেও যায়নি। আমিও জোর করিনি। সব সময় চেষ্টা করি, তার জায়গায় থেকে, তার মতো করে তাকে বুঝতে।

তার কাছে সবচেয়ে কঠিন বিষয় হল, ধর্ম। পরীক্ষা নিকটবর্তী হলেই, সে এই বিষয়টা বার বার রিভিশন দিতে থাকে আর কাঁদতে থাকে। আমি বুঝি না, এই বিষয়টা তার কাছে এতো কঠিন মনে হওয়ার কারনটা কী? আজ তিন দিন যাবৎ পড়ছে আর কাঁদছে। এই বইটা শেষ করবে বলে স্কুলেও যায়নি।

সকালের নাস্তা তৈরি করে দিয়ে অফিসে চলে গেলাম।
ঘন্টাখানেক পরেই মেয়ে আমাকে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে ফোন দিয়ে বলে,
“আম্মু, বাসায় কখন আসবা?”
=কাজ শেষ করেই আসবো।
মা, তুমি নাস্তা করেছো?
=বলল, “না, করিনি।”
তাড়াতাড়ি নাস্তা করো।

কিছুক্ষণ পর আবারো ফোন করে একই কথা,
“কখন আসবা?”
শেষে দুপুর ২টার দিকে আবারও ফোন এবং একই কথা, “আম্মু আমার কিছুই মনে থাকে না। তুমি কখন আসবা?”
খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করলাম। তখনো কিছুই খায়নি। কী করি, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ফোনেই কিছুক্ষণ রাগারাগি করলাম, খাওয়া দাওয়ার ব্যাপার নিয়ে। এরপর তাড়াতাড়ি হাতের কাজগুলো শেষ করে বাসায় গেলাম।

মেয়ের সাথে কথা বললাম।
ওকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম।
গত পরীক্ষায় ধর্মতে কত পেয়েছে জানতে চাইলাম।
=বলল, “৯৯ পেয়েছি”।
আচ্ছা, এইবার যদি ৯৯ এর চেয়ে কম পাও, তাহলে কি তোমার স্যার বকবেন?
=বলল, “না বকবে না।” তোমাকে স্কুল থেকে বের করে দিবে?
=বলল, “না।”
তুমি কি কারো সাথে প্রতিযোগিতা করছো?
= “সেটাও না।”
আমি কিংবা তোমার বাবা বকবে?
= “সেটাও না।”
আমি কি কখনো তোমাকে প্রথম হতে হবে কিংবা ১০০-তে ১০০ পেতে হবে বলে চাপ দিয়েছি?
=বলল, “না।”
সবই যখন না, তাহলে কেন তুমি এতো চাপ নিচ্ছো? আর কান্না করছো? বললাম, চলো আমার সাথে!

এরপর মেয়েকে চেম্বারে নিয়ে গেলাম। কাজ শেষ করে স্টেশনের প্লাটফর্মে বসে ওর পছন্দের তেঁতুল চা ও কদবেল খেলাম মা-মেয়ে মিলে। ওকে অনেক বুঝালাম। নিজের শরীরের যত্ন নাও। সময় মতো খাওয়া দাওয়া করো। নিয়ম করে বিশ্রাম করো। ঘুমাও। গল্পের বই পড়ো। খেলাধুলো করো। শুধুমাত্র পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য এই সুন্দর পৃথিবীতে আসোনি! সুস্থ থেকে সব কিছু মেইনটেইন করে যতটুকু পারো পড়ালেখা করো। বেচেঁ না থাকলে, সুস্থ না থাকলে বেশি নম্বর দিয়ে কী হবে! সব সময় ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড হলেই যে কেবল জীবনে ভালো কিছু করা যাবে কিংবা জীবন ফুলে ফলে ভরে যাবে এমনটা কিন্তু নয়। দুঃশ্চিন্তা মুক্ত থাকো, যতক্ষণ পড়ো মনোযোগ দিয়ে পড়ো। আর স্বপ্ন দেখো। ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করো। ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখো।

আমি জানি না, আমার জায়গায় অন্য কোন গার্ডিয়ান হলে কী করতেন?
কিংবা আমিও কোন ভুল কিছু করেছি কি-না?
কর্মজীবী মা আমি। সারাক্ষণ বাইরে থাকি। কী করা উচিৎ, আর কী করা উচিৎ নয়, মাঝে মধ্যে দ্বিধায় ভোগী। আমরা পড়াশোনা নিয়ে কোন রকম চাপ দিতে না চাইলেও বিদ্যালয়ে, বন্ধুদের মধ্যে, অভিভাবকদের মধ্যে, চারপাশে এতো চাপ আর প্রতিযোগিতা যে, সেসব কোন না কোনভাবে মেয়ের উপর প্রভাব ফেলে। হয়তো মেয়েকে আমার আরোও সময় দেয়া উচিৎ। কিন্তু তাকে আর তার ছোট ভাইকে সুন্দর একটা পৃথিবী উপহার দিতে, জীবনটা মোটামুটিভাবে পরিচালনা করতে জীবিকার্জনও তো করতে হবে।

আরো পড়ুন

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাম্প্রতিকা