শনিবার, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪
Homeঅর্থকড়ির জগৎতৈরি পোশাক শ্রমিক জিন্নাতুন নেছাদের প্রাত্যহিক জীবনগাঁথা

তৈরি পোশাক শ্রমিক জিন্নাতুন নেছাদের প্রাত্যহিক জীবনগাঁথা

জিন্নাতুন নেছা, গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর। ঢাকায় এসেছেন অনেক বছর হলো। স্বামী কাজ করতেন ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে। স্বামীর কাজ চলে যাবার পর থেকে অদ্যাবধি এই বোনটিই পুরো সংসারের দায়িত্ব কাঁধে বহন করে চলেছেন। আগের কারখানায় যখন কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়, তখন তার কাজও চলে যায়।

৭ বোন ২ ভাইয়ের সংসারে বেড়ে ওঠা জিন্নাতুন নেছা সামাজিকতা রক্ষা করতে গিয়ে ও চক্ষুলজ্জায় পৈত্রিক সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হন। পরবর্তীকালে অনেক চেষ্টায় অন্য একটি কারখানায় কাজ পান। তার আরও এক বোন কারখানায় কাজ করেন।

তবে দুই সন্তানের জননী জিন্নাতুন নেছাদের গল্পতো শুধু সংগ্রামের আর নিষ্পেষিত হবারই। জিন্নাতুন নেছা যে কারখানায় কাজ করেন, সেখানে সকাল ৮ থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত কাজ করেন। আটটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত শ্রম দেবার পর যখন দুই পায়ে দাঁড়িয়ে থাকাই দায়, উচ্চ মূল্যের বাজারে সংসারের ভারে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় আরো ছয় ঘন্টা। কারণ নির্ধারিত সময় কাজের জন্য মজুরি পান মাত্র ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা। কোন রকম মাথা গুঁজতে ছোট্ট একটা বাসায় বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ছাড়াই তার চলে যায় ৪৫০০ টাকা। বাকি টাকায় তার চালাতে হয় সংসার। কোথায় তার সঞ্চয়, অসুস্থতাতেই বা কী করবেন? জিন্নাতুন নেছা জানালেন, বিয়ের আগে তিনি ইন্টার পাশ করেছেন। আর ছাত্রী হিসেবে নেহাত মন্দ ছিলেন না।

জিজ্ঞেস করলাম, ছুটি ছাঁটা কিছু পান তবে! শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। কাজের চাপ থাকলে সেদিনও চলে কারখানা। কাজে আসার আগে সকালে রান্না করে রেখে আসেন তিনি। ফিরতে রাত সাড়ে এগারোটা বারোটা বেজে যায়। তাই রাতের খাবার রান্না করেন উনার স্বামী।

জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে ছিলো, জিন্নাতুনদের বিনোদনের মাধ্যম তবে কী? সাহস হয় নাই। সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কারখানায় কাজ করা শ্রমজীবী এই নারীর কাছে যদি মনে হয়, আমি মশকরা করছি!

যাকে রাত সাড়ে বারোটা একটার দিকে ঘুমাতে যেতে হয়, জাগতে হয় ফজরের আজানের পরপরই। তারপর ঠুকঠুক হাঁড়ি পাতিলের শব্দে রান্নার তোর জোর শুরু করতে হয়, এরপর আবার সকাল আটটা থেকে রাত একটা। তাদের আবার বিনোদন!

আহা! জিন্নাতুন নেছা, আপনাদের আবার উৎসব, ঈদ, পার্বণ আর খুশি! এইবার ঈদেও তো সব তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক সময় মতো মজুরি, বোনাস ভাতা পাননি!

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাম্প্রতিকা