“বাংলাদেশের সবাই এক পরিবার।
পার্থক্য বা বিভেদ করার কোন সুযোগ নাই।”
গত ১৩ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করতে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, “আমাদের গণতান্ত্রিক যে আকাঙ্ক্ষা, সেখানে আমরা মুসলমান হিসেবে নই, হিন্দু হিসেবে নই, মানুষ হিসেবে বিবেচিত।”
বর্তমান সরকারকে আমরা একটা প্রশ্ন রাখতে চাই, দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারীদেরকেও কি ধর্মীয় কিংবা লৈঙ্গিক পরিচয়ের বাইরে গিয়ে তারা মানুষ হিসেবে এবং দেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করেন? সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইন, সন্তানের অভিভাকত্বের আইন, CEDAW সনদের গুরুত্বপূর্ণ ২ টি ধারায় আজও সরকারের আপত্তি ইত্যাদি তো বলে না রাষ্ট্র/ সরকার নারীদের মানুষ ও নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে!
ব্যক্তি যখন নাগরিক হিসেবে, মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয় না এবং তার অধিকারগুলো কোন রাষ্ট্রে ঠিকঠাক মতো বুঝে পায় না, তখনই তারা কখনো হিন্দু হিসেবে, কখনো নারী কিংবা আদিবাসী কিংবা মুসলিম ইত্যাদি বর্গ হিসেবে সামনে আসেন। আসতে বাধ্য হোন। এইভাবে সামনে আসার পথ বন্ধ করার একটাই উপায়, তাদের মানুষ ও নাগরিক হিসেবে অধিকার ও মর্যাদা পুরোপুরি ফিরিয়ে দেওয়া এবং বাস্তব জীবনে প্রতিষ্ঠিত করা।
মাস তিনেক আগে বৈষম্য বিলোপের লড়াই করতে গিয়েই বহু প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে আজকের সরকারের উত্থান। লড়াইয়ে বিপুল সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ অভ্যুত্থানের গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছিল তখন। নরসিংদী, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা এবং সারাদেশে থাকা “নারী অঙ্গন”র বন্ধুরাও এই লড়াইয়ে সম্মুখ সারিতে থেকে লড়েছে এবং কোথাও কোথাও নেতৃত্বও দিয়েছে জীবন বাজি রেখে। গত ২৯ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেন, যা মিডিয়াগুলো ফলাও করে প্রচার করেছে। আমরাও সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করতে পারলে CEDAW ( নারী অধিকার বাস্তবায়নে এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক ম্যাগনাকার্টা হিসেবে পরিচিত) সনদের ২ টি ধারা ( ২ ও ১৬. ১ এর গ) থেকে বিদ্যমান আপত্তি তুলে নিতে সমস্যা কোথায়? কিংবা আপত্তি তুলে নেওয়া হচ্ছে না কেন?
সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দাবি এবং আহবান জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে বাস্তবায়ন করতে তারা যেন CEDAW সনদের ধারাগুলো থেকে বিদ্যমান আপত্তি তুলে নেন। সেই সাথে সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইন থেকে শুরু করে সব রকম বৈষম্যমূলক আইনগুলো বাতিলের উদ্যোগ নিন।